বাঁশ ও বেতের তৈরি কুলা, চালুন, খাঁচা, মাচা, মই, চাটাই, ঢোল, খোল, গোলা, ঝুঁড়ি, ডুলা, ধামা, সেড়, মোড়া, মাথাল, সোফাসেট, বইপত্র রাখার র্যাক, মাছ ধরার ঘুনিসহ বিভিন্ন আসবাবপত্র, বাঁশের ঘর, বেড়া, ঝাপ, বেলকি, দরমা বাংলাদেশের নিজস্ব শিল্প-সংস্কৃতির প্রতীক।
দৈনন্দিন কাজে ব্যবহৃত বাঁশের তৈরি গৃহস্থালি পাত্রসমূহ খুবই আকর্ষণীয়। প্লাস্টিকের তৈরি জিনিসপত্রের ভিড়ে হারাতে বসেছে বাঁশ ও বেতের তৈরি জিনিসপত্র।
আর এতে কুটিরশিল্পের সাথে জড়িত ফরিদপুরের সালথা উপজেলার ২০টি পরিবার পড়েছেন অর্থনৈতিক সংকটে। যে কারণে তাদের মধ্য থেকে অনেকেই বেঁছে নিয়েছেন অন্য পেশা।
সম্প্রতি সরেজমিনে সালথা সাহাপাড়া ও মোড়হাট গ্রামে ঋষি পাড়া গিয়ে দেখা যায়, বাঁশ ও বেত থেকে চটা বের করে নিপুণ হাতের কারুকাজে স্বপ্ন বুনছেন ঋষি সম্প্রদায়ের কৃষ্ণ দাস, প্রভাস দাস, রানি দাস, সত্যে রঞ্জন দাস, মন্টু দাস ও অনামিকা দাসসহ ২০টি পরিবার। কৃষিনির্ভর এলাকাটিতে তারা বারোমাসই এই পণ্য তৈরি করেন। এতে তারা বর্তমানে কষ্টের দাম না পেলেও বংশপরম্পরায় বাঁশ ও বেতের পণ্য বানানো তাদের একটি নেশা। তাই এখনো মনের মাধুরী মিশিয়ে কুটিরশিল্পের বুনন কাজটি তাদের করতে দেখা গেছে।
কুটির শিল্পের কারিগররা বলেন, যুগ যুগ ধরে বাঁশের কুলা-ডালা, চালন, ঝাঁকা, বেতের ধামা, সের ও দাঁড়িপাল্লা সহ নানা ধরনের পণ্য নিজেদের হাতে তৈরি করে জীবিকা নির্বাহ করে আসছি আমরা। কিন্তু বাজারে প্লাস্টিকের ভিড়ে আমাদের তৈরি বাঁশ ও বেতের পণ্যের কদর দিন দিন কমে যাচ্ছে।
বর্তমানে অনেক পরিবার শখ করে বাঁশ ও বেত দিয়ে তৈরি কিছু পণ্য গৃহস্থালির কাজের ব্যবহার করছেন বলেই এখনো এ শিল্পটি টিকে আছে। এমন অবস্থায় আমরা তেমন ভালো নেই। খেয়ে না খেয়ে আমাদের জীবন চলছে। সরকার যদি আমাদের পুঁজি ব্যবস্থা করে দেয়, তাহলে এই পেশাটাকে এগিয়ে নিতে পারবো। সেই সাথে আমরা একটু ভালোভাবে চলতে পারব।
তারা আরো বলেন, বাজারে প্লাস্টিকের সামগ্রীর সরবরাহে বন্ধ থাকলে, পরিবেশবান্ধব এসব পণ্য টিকে থাকবে, বেঁচে থাকবে ঋষি সম্প্রদায়ের এসব জীবন জীবিকা।
সালথা উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. আনিছুর রহমান বালী বলেন, কুটির শিল্প টিকিয়ে রাখার জন্য সরকার বিভিন্ন সময় প্রশিক্ষণ প্রদান ও সহায়তা দিয়ে থাকে। তাদের পণ্যের গুণগত মান যদি ভালো করে তাহলে এই কটির শিল্প টিকিয়ে রাখা সম্ভব।
সালথা উপজেলায় এই পেশার সাথে যারা জড়িত তাদেরকে প্রশিক্ষণের আওতায় এনে সব ধরনের সহযোগিতা করার চেষ্টা করব।
মন্তব্য