দ্বিতীয় স্ত্রী বিলকিস আক্তারকে নিয়ে ঘুরতে বের হয়েছিলেন স্বামী মিজানুর রহমান সুমন। ঘুরতে বেরিয়ে নিজের গাড়িতে করে সুমন তার স্ত্রীকে নির্জন জঙ্গলে নিয়ে যান। পরে পাইপ দিয়ে গাড়ি থেকে পেট্রোল বের করে বোতলে ভরেন তিনি। এ সময় গাড়ির ভেতরেই বসেছিলেন বিলকিস।
এক পর্যায়ে বিলকিস গাড়ি থেকে নামলে বোতলে রাখা পেট্রোল তার শরীরে ছিটিয়ে আগুন ধরিয়ে দেন সুমন। স্বামীর দেওয়া আগুনে দাউ দাউ করে জ্বলতে থাকেন বিলকিসের। এ সময় সুমন দ্রুত ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে আসেন।
গাজীপুরের কালীগঞ্জ থানাধীন এলাকা থেকে স্ত্রীর শরীরের পেট্রোল ঢেলে আগুন ধরিয়ে হত্যার ঘটনায় সুমনকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব। গ্রেপ্তারের পর সুমন নিজেইে র্যাবকে এসব তথ্য জানান।
এর আগে র্যাব-১ এর সদস্যরা মঙ্গলবার সন্ধ্যায় গাজীপুর মহানগরের বাসন থানার নাওজোড় এলাকা থেকে সুমনকে গ্রেপ্তার করেন।
মিজানুর রহমান সুমন কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলার মফিজুল ইসলামের ছেলে। ট্যাক্সিচালক সুমন তার প্রথম স্ত্রী শিমু, দেড় বছরের মেয়ে এবং মাকে নিয়ে রাজধানীর তুরাগ থানার রানাভোলা এলাকায় ভাড়া বাসায় থাকত।
র্যাব-১ এর সহকারী পুলিশ সুপার মাহফুজুর রহমান জানান, বছর দুয়েক আগে সুমন পরিবারকে না জানিয়ে বিলকিসকে দ্বিতীয় বিয়ে করে। পরে তুরাগ থানার রানাভোলা থেকে ২ কিলোমিটার দূরে নয়াপাড়া এলাকায় বাসা ভাড়া করে বসবাস করতে শুরু করে। কিন্তু উবারে ট্যাক্সি চালিয়ে দুই স্ত্রীকে চালাতে হিমশিম খেত সে। সংসারে অভাব-অনটন লেগেই থাকত। এর মধ্যে গত ৪ মাস ধরে সুমনের কাছে কিছু টাকা চাচ্ছিল বিলকিস। এ নিয়ে তাদের মধ্যে মনোমালিন্য শুরু হলে সুমন দ্বিতীয় স্ত্রী বিলকিসকে হত্যার পরিকল্পনা করে। এরপর থেকে প্রায়ই বিলকিসকে নিয়ে পূর্বাচল এলাকায় ঘুরতে যাওয়ার নাম করে তাকে হত্যার সুযোগ খুঁজতে থাকে সুমন।
র্যাব জানায়, গত রোববার দুপুরের পর বিলকিসকে নিয়ে পূর্বাচল এলাকায় ঘুরতে বের হয় সুমন। পথে চা পান করার ফাঁকেও তাকে হত্যার জায়গা ও সুযোগ খুঁজতে থাকে। পরে বিলকিসকে গাজীপুরের কালীগঞ্জ থানার পূর্বাচল ২৪নং সেক্টরের নিরিবিলি এলাকায় জঙ্গলে নিয়ে যায় সুমন। সেখানেই গাড়ি থামিয়ে স্ত্রীকে ভেতরে বসিয়ে রেখে পাইপ দিয়ে গাড়ি থেকে পেট্রোল বের করে বোতলে ভরে সে। পরে স্ত্রীর শরীরে ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয়।
এ সময় বিলকিস তাকে বাঁচানোর জন্য চিৎকার করতে থাকেন। তার চিৎকারে আশেপাশের লোকজন ছুটে এসে তাকে একটি ড্রেন থেকে উদ্ধার করে রাজধানীর কুর্মিটোলা হাসপাতালে নিয়ে যান। কিন্তু অবস্থার অবনতি হলে তাকে শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে পাঠানো হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় পরদিন বিলকিস মারা যান।
এদিকে ঘটনার পর বিলকিসের ঘাতক স্বামী সুমন আত্মগোপনে চলে যায়। পরে র্যাব-১ সুমনকে গ্রেপ্তারে অভিযান শুরু করে। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় তাকে গাজীপুরের বাসন থানার নাওজোড় এলাকা থেকে গ্রেপ্তারে সক্ষম হয় র্যাব। এ ঘটনায় সুমনের বিরুদ্ধে মামলার প্রস্তুতি চলছে বলে জানান র্যাবের ওই কর্মকর্তা।
মন্তব্য