চোখের জল থামছে না  মুদি দোকানদার ছরোয়ার  স্বজনের

  • মামুনুর রশীদ, নিজস্ব প্রতিবেদক:
  • মঙ্গলবার, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪ ১২:১২:০০
  • কপি লিঙ্ক

পিতার পৈতৃক ভীটে-জায়গা হলেও  স্ত্রী পরিবার-পরিজন নিয়ে পরবাসের মত বসবাস করতেন মুদি দোকানদার ছরোয়ার মুন্সী। প্রতিদিনের মতো হাসিমুখের ঘর থেকে বের হন তিনি। কিন্তু নিজের গ্রামে আধিপত্য বিস্তার ঘটনায় সংঘাতের সময় প্রতি পক্ষের ধারালো অস্ত্রের আঘাতে জখম হওয়ার ১১দিন পর মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন ফরিদপুরের ভাঙ্গা উপজেলার ঘারুয়া ইউনিয়নের সাওতি কান্দা গ্রামের হতদরিদ্র ছরোয়ার মুন্সী। 

পুলিশ লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানোর পর গ্রামের গোরস্থানে তাকে রোববার বিকেলে দাফন করেছেন স্বজনরা। অভিযোগ দাফন কাজ সম্পন্ন করার পর গভীর ষড়যন্ত্রের শিকার হচ্ছেন ছরোয়ার মুন্সীর পরিবার। তার মৃত্যুর পর এলাকার প্রভাবশালী পরিবার গুলো রাখছে তাদের চোখে চোখে। অসহায় পরিবারটি ন্যায় বিচার পাওয়ার আগেই ছরোয়ার মুন্সীর মৃত্যুর ঘটনাটি ধামাচাপা দিতে মারিয়া উঠেছে রাঘব বোয়ালরা। 

বিশেষ করে নগদ অর্থ নিয়ে মীমাংসার জন্য বিভিন্ন ভাবে চাপপ্রয়োগ ও হুমকি ধামকি দিচ্ছে বলে অভিযোগ করেন ভুক্তভোগী পরিবারের সদস্যরা।

গতকাল সোমবার সরজমিন তদন্ত গিয়ে জানা যায় সরোয়ার মুন্সী পরিবার ও গ্রামের সাধারণ মানুষের মুখ থেকে বেড়িয়ে এসেছে তাদের অভিযোগ।

জানা যায়, ভাঙ্গা উপজেলার সাওতি কান্দা গ্রামের মৃত মোবারক মুন্সীর ছেলে ছরোয়ার মুন্সী দীর্ঘদিন পাকিস্তানে বসবাস করতেন। তার দেশে ফিরে আসার অনিশ্চয়তা জেনে পিতার পৈতৃক ভিটা-জায়গা থেকে তাকে বঞ্চিত করা হয়। কিন্তু একটি সময় তিনি বাড়িতে ফিরেন ঠিকই ততদিনে সন্তানকে বঞ্চিত করে সম্পদ লিখে দেন তার নাতির নামে। এনিয়ে পিতার সাথে তার মনোমালিন্য সৃষ্টি হলোও একজন ভালো মানুষ হওয়ায় কোন প্রতিবাদ না করে নতুন করে জীবিকার সন্ধান শুরু করেন নিজস্ব এলাকায় একটি মুদি দোকান দিয়ে। 

দ্বিতীয় বিয়ের মধ্য দিয়ে দুই মেয়ে ও দুই ছেলে নিয়ে বেশ ভালই কাটছিল ছরোয়ার মুন্সির পরিবারের দিনগুলি। নতুন ৯ ডিসেম্বর সাউথিকান্দা গ্রামে আধিপত্য বিস্তার কেন্দ্র করে বৃহস্পতিবার (১২ ডিসেম্বর) সকালে টাকা চাওয়াকে কেন্দ্র করে আবু সাঈদের সঙ্গে এলাকার আওলাদ মাতুব্বরের কথাকাটাকাটির ও হাতাহাতির ঘটনার জের ধরে দুদল গ্রামবাসী সংঘবদ্ধ হয়ে দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। ওই সংঘর্ষের ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া চলাকালীন সময়ে ছরোয়ার মুন্সী মুদির দোকানের মাল কিনতে মালিগ্রাম বাজারে আসছিল। এ সময় তাকে প্রতিপক্ষ ভেবে সামচুল দাইর লোকজন দেশীয় ধারালো অস্ত্র দিয়ে এলোপাতাড়ি পাবে কুপিয়ে গুরুতর জখম করে। 

স্থানীয় লোকজন তাকে উদ্ধার করে ভাঙ্গা  উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে। পরবর্তীতে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা শেষে গত ২০ ডিসেম্বর বাড়িতে আনলেও ২১ ডিসেম্বর রাতে তিনি ফের অসুস্থ হয় এবং ভাঙ্গা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাওয়ার পর তার মৃত্যু হয়।

ছরোয়ার মুন্সীর স্ত্রী মাজেদা বেগম বলেন, আমরা নির্দোশ স্বামীকে যারা হত্যা করে আমাকে বিধবা ও সন্তানদের এতিম করেছে তাদের যেন সঠিক বিচার হয়। তাহলে আমরা শান্তি পাবো। একথা বলতেই তিনি কান্নায় ভেঙে পড়েন।
মেয়ে সাহিদা ও সোনিয়া বলেন, আমাদের পিতা ঘর থেকে হাসিভরা মুখে মা ডাক দিয়ে বাজারে দোকানের মালামাল কিনতে গেল কিন্তু পাষণ্ডরা কিভাবে আমার পিতাকে নির্মমভাবে কুপিয়ে জখম করলো? ওদের কারণে আমরা আজ এতিম হলাম। আমাদের পিতার হত্যাকারীদের ফাঁসি চাই। 

চাচা জাফর মুন্সী বলেন, আমার ভাতিজা চলে গেছেন কিন্তু ঘটনা ধামাচাপা দিতে এলাকার প্রভাবশালীদের অনেকেই আমাদের উপর চাপ প্রয়োগ করছে। মামলা মকদ্দমা না হয়। ঘটনা মীমাংসার জন্য গোটা পরিবারের সদস্যদের হুমকি ধামকি দিচ্ছে বলে অভিযোগ করেন তিনি। 

ছরোয়ার মুন্সীর ছোট ছেলে আদরের সন্তান মোস্তফা মুন্সী। বাড়িতে পিতার জন্য হাউমাউ করে কাঁদছেন। এখন তাদের কি হব? বটগাছের ছায়ার মতো ছিল তাদের পিতা। শুধু বার বার বাড়িতে আসা মানুষের মুখের দিকে তাকিয়ে বলছে আদৌ তারা পিতা হত্যার বিচার পাবে কি? 

ভাঙ্গা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোকছেদুর রহমান জানান, সংঘর্ষের ঘটনায় পুর্বে একটি মামলা হয়েছে । আহত ব্যাক্তির মৃত্যুর বিষয়ে আইনগত ব্যবস্থায় আগের মামলার সাথে সংযুক্ত করা হবে।

 

সংশ্লিষ্ট সংবাদ

মন্তব্য