বিরামপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নার্সের বিরুদ্ধে দুর্ব্যবহারের অভিযোগ

  • মো. সামিউল আলম, দিনাজপুর প্রতিনিধি: 
  • বৃহস্পতিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১১:০৯:০০
  • কপি লিঙ্ক

দিনাজপুরের বিরামপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এক শিশু রোগীকে ভুল সেবা দেওয়া এবং শিশুর বাবা-মা'র সাথে অশোভন আচরণ ও দূর্ব‍্যবহারের অভিযোগ উঠেছে।

এ বিষয়ে সাইদুল ইসলাম বাবু নামের ভুক্তভোগী শিশুর বাবা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা বরাবর গত মঙ্গলবার একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।

জানা গেছে, অভিযুক্ত নার্স নূরজাহান বেগম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের একজন সিনিয়র স্টাফ নার্স এবং তিনি বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে পারিবারিক ভাবে দলীয় ক্ষমতার দাপটে ১৪ বছর ধরে এই হাসপাতালে কর্মরত রয়েছেন।

লিখিত অভিযোগে বলা হয়েছে, গত ১১ সেপ্টেম্বর রাতে বিরামপুর পৌর এলাকার বেগমপুর গ্রামের নাফিসা ইসলাম (৬) নামের এক শিশুর পেটে তীব্র ব্যাথা শুরু হলে তাকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে এসে কর্তব্যরত চিকিৎসকের পরামর্শে মেয়েকে হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। চিকিৎসাধীন থাকা অবস্থায় নার্স নূরজাহান বেগম শিশু নাফিসা ইসলামের হাতে অমানবিক ভাবে ইনজেকশন পুশ করার কারণে সে উক্ত নার্সকে দেখলেই ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে পড়ে। 

পরের দিন আবারও ঐ নার্স ইনজেকশন দিতে এলে শিশুর মা কায়মুন্নাহার মেয়ের হাতে ধিরস্থির ভাবে ইনজেকশন পুশ করতে অনুরোধ করেন। সে সময় নার্স নূরজাহান বেগম প্রচন্ড রাগান্বিত হয়ে শিশুর মাকে অশালীন ও অশ্লীল ভাষায় গালিগালাজ করেন। পরে অসহনীয় ভাবে ক‍্যানোলার মধ্যে ইনজেকশন পুশ করার কারণে শিশু নাফিসা ইসলামের হাতে লাগানো ক্যানোলা খুলে যায়। 

এ অবস্থাতেই সেই নার্স ইনজেকশন পুশ করতে থাকে। নার্সের পুশকৃত ইনজেকশন শিশু নাফিসার হাতের ভ্যানে না গিয়ে মাংসের মধ্যে ঢুকে যায় এবং ক্ষতস্থান থেকে রক্ত বের হয়ে হাত অনেক ফুলে যায়। পরে শিশুর মা ঘটনাটি মুঠোফোনে শিশুর বাবাকে জানালে শিশুর বাবা সেখানে গিয়ে অভিযুক্ত নার্সের কাছে এমন ঘটনার কারণ জানতে চাইলে সেই নার্স আরো রাগান্বিত হয়ে শিশুর বাবার সাথেও দূর্ব‍্যবহার করেন এবং রোগীকে নিয়ে হাসপাতাল ছেড়ে চলে যেতে বলেন।

ঘটনার বিষয়ে জানতে চাইলে নার্স নুরজাহান বেগম তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ অস্বীকার করেন।

উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. গোলাম রসূল রাখি জানান, সিনিয়র স্টাফ নার্স নূরজাহান বেগমের বিরুদ্ধে একজন শিশু রোগীকে ভুল সেবা ও তার বাবা-মা'র সাথে অসদাচরণের একটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। বিষয়টি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

উল্লেখ্য যে, এর আগেও গত ৯ সেপ্টেম্বর এই হাসপাতালে অনামিকা নামে এক গর্ভবতী মা সন্তান প্রসবের পরে কর্তব্যরত মিডওয়াইফারি কহিনুর বেগমের ভুল সেবার কারণে মায়ের অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ শুরু হলে রোগীর স্বজনেরা দিনাজপুর সদরে রোগীকে নিয়ে গিয়ে উন্নত চিকিৎসা করে সারিয়ে তুলেন বলে ভুক্তভোগী রোগীর স্বজনেরা জানিয়েছেন। 

এ নিয়ে রোগীর স্বজনদের সাথে ঐদিন উপস্থিত নার্সদের কিছুটা বাকবিতন্ডা হয় এবং সেদিন রাতেই কর্তব্যরত চিকিৎসক উভয় পক্ষকে নিয়ে বিষয়টি মিমাংসা করে দেন। কিন্তু নিজেদের ভুল সংশোধন না করে কয়েকজন নার্স মিলে ইচ্ছাকৃত ভাবে বিদ্বেষমূলক সেই রোগীর এক স্বজনের বিরুদ্ধে ঘটনা সাজিয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের নিকট একটি লিখিত অভিযোগ দেন।

প্রায়শই বিরামপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কিছু নার্স ভর্তিকৃত রোগী ও রোগীর স্বজনদের সাথে দূর্ব‍্যবহার করে থাকেন বলে ভুক্তভোগীরা জানিয়েছেন। তবে কিছু পেশাদার নমনীয় নার্সও রয়েছেন যারা রোগীদের সর্বোচ্চ সেবা দিয়ে থাকেন বলে জানা গেছে। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে যে সকল নার্স রোগী ও রোগীর স্বজনদের সাথে অপেশাদার আচরণ ও দূর্ব‍্যবহার করে থাকেন, নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে তাদেরকে চিহ্নিত করে বিরামপুর হাসপাতাল থেকে বদলী করা সহ বিভাগীয় শাস্তির দাবি জানিয়েছেন সেবা নিতে আসা ভুক্তভোগী রোগী ও স্বজনেরা।

সংশ্লিষ্ট সংবাদ

মন্তব্য