স্ত্রী-সন্তানসহ পাশাপাশি কবরে চিরঘুমে বাবুল, শোকে স্তব্ধ গ্রাম

  • অনলাইন
  • সোমবার, ০২ অক্টোবর ২০২৩ ০৬:১০:০০
  • কপি লিঙ্ক

পাশাপাশি কবরে স্ত্রী-সন্তানসহ চিরনিদ্রায় শায়িত হলেন রাজধানী ঢাকার আশুলিয়ায় নৃশংস হত্যাকাণ্ডের শিকার গার্মেন্টস শ্রমিক মুক্তার হোসেন বাবুল। আজ সোমবার সকালে ঠাকুরগাঁওয়ের পীরগঞ্জ উপজেলার গরুড়া (ফুলবাড়ী) গ্রামে জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে তাঁদের লাশ দাফন করা হয়।

এর আগে সকাল ৭টার দিকে মুক্তার হোসেন বাবুল (৪৮), তাঁর স্ত্রী শাহিদা বেগম (৩৫) ও তাঁদের ছেলে মেহেদী হাসান জয়ের (১৫) লাশবাহী অ্যাম্বুলেন্স তাঁদের গ্রামের বাড়ি গরুড়ায় পৌঁছায়। এ সময় তাঁদের স্বজনদের আহাজারিতে এলাকার পরিবেশ ভারী হয়ে ওঠে।

নিহত বাবুলের বড় ভাই সাবেক ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সদস্য আইনুল হক বলেন, ঢাকার আশুলিয়ায় স্ত্রী-সন্তানসহ তাঁর ভাইকে শয়নকক্ষে হাত-পা বেঁধে গলা কেটে হত্যা করা হয়। তাঁর ধারণা, ওই এলাকার কোনো এক বাসার মালিকের মেয়ের সঙ্গে তাঁর ভাতিজা মেহেদী হাসান জয়ের সম্পর্ক থাকায় এই খুনের ঘটনা ঘটে থাকতে পারে।

কাঁদতে কাঁদতে বারবার মূর্ছা যাচ্ছিলেন বাবুলের বড় বোন খদেজা বেগম, ভাবি জুলেখা বেগম, ভাতিজি আঞ্জু বেগম। স্বজন ও প্রতিবেশীরা তাঁদের সান্ত্বনা দেওয়ার চেষ্টা করছিলেন। বড় বোন খদেজা বেগম কাঁদতে কাঁদতে বলছিলেন, ‘আমার ছোট ভাই, ভাতিজা, ভাইয়ের বউকে এমন নির্মমভাবে হত্যার বিচার দেখতে চাই। ভাইটা অনেক কষ্ট নিয়ে বড় হয়েছে। তাকে অনেক কষ্ট দিয়ে মেরেছে খুনিরা।’

ওই গ্রামের বাসিন্দা মজনু মিয়া বলেন, একসঙ্গে একই পরিবারের তিনজনকে গলা কেটে হত্যার ভার সইতে পারছে না এলাকাবাসী। শোকে স্তব্ধ পুরো গ্রাম। এই নৃশংস হত্যাকাণ্ডের পেছনে কারা রয়েছে, তা জানতে চান স্বজনেরা। খুনিদের দ্রুত গ্রেপ্তারের মাধ্যমে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানায় এলাকাবাসী।

স্থানীয় ইউপি সদস্য মো. মান্নান বলেন, বড় ভালো মানুষ ছিলেন বাবুল। আচার-ব্যবহারে ছিলেন নরম ও বিনয়ী। তাঁদের পরিবারের কারও বাজে কোনো নেশা বা বাজে স্বভাব ছিল না।

স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান মোস্তফা আলম বলেন, ‘হত্যাকারীদের আইনের আওতায় এনে শাস্তির দাবি জানাচ্ছি।’

স্বজনেরা জানিয়েছেন, বাবুলের বাবা শহির উদ্দিন মুন্সি ছিলেন মসজিদের ইমাম। তাঁর চার ছেলে ও তিন মেয়ের মধ্যে বাবুল ছিলেন সবার ছোট। গত বছর তাঁর বড় ভাই মারা যান। মা-বাবাও বেঁচে নেই। অভাব-অনটনে চলত তাঁদের সংসার। ২০ বছর আগে বাবুল এসএসসি পরীক্ষা দিয়ে ঢাকায় চলে যান। শুধু ঈদ উৎসবে স্ত্রী-সন্তানসহ বাড়ি আসতেন।

উল্লেখ্য, গত শনিবার রাতে ঢাকার আশুলিয়ায় নিজ ঘর থেকে মুক্তার হোসেন বাবুল, তাঁর স্ত্রী শাহিদা আক্তার ও ছেলে মেহেদী হাসানের গলাকাটা লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। এ ঘটনায় গতকাল রোববার বাবুলের বড় ভাই আইনুল হক আশুলিয়া থানায় অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তিদের আসামি করে হত্যা মামলা করেন। আইনি প্রক্রিয়া শেষে তাঁদের লাশ ঠাকুরগাঁওয়ে নিয়ে আসা হয়।

সংশ্লিষ্ট সংবাদ

মন্তব্য