পাংশায় জন্মনিবন্ধন জটিলতায় যেন ভোগান্তির শেষ নেই

  • পাংশা (রাজবাড়ী) প্রতিনিধি:
  • বৃহস্পতিবার, ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ০১:০৯:০০
  • কপি লিঙ্ক

রাজবাড়ীর পাংশায় জন্মনিবন্ধন জটিলতায় যেন ভোগান্তির শেষ নেই। নতুন নিবন্ধন ও সংশোধনীর আবেদন করে মাসের পর মাস ইউনিয়ন ও উপজেলা পরিষদে ঘুরছেন ভূক্তভোগীরা। তবুও মিলছে না জন্মনিবন্ধন সনদ।

এতে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন উপজেলার আড়াই হাজারেরও অধিক পরিবার। এই জন্মনিবন্ধন এখন রিতিমত গলার কাটা হয়ে দাড়িয়েছে তাদের। বিরম্বনায় পড়ছেন ইউনিয়ন পরিষদের প্রশাসনিক কর্মকর্তারাও (সচিব)।

শুধু স্কুলে ভর্তি, রেজিষ্ট্রেশন, চাকরিতে নিয়োগ, পাসপোর্ট, জাতীয় পরিচয়পত্র সহ ১৯টি ক্ষেত্রে জন্ম সনদ আবশ্যক। যে কারণে বছর জুড়ে সিটি করপোরেশন, পৌরসভাসা ও ইউনিয়ন পরিষদ থেকে জন্ম সনদ নিতে ভিড় লেগেই থাকে। 

উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়র পরিষদ ঘুরে জানা যায়, পূর্বে জন্মনিবন্ধন করা হলেও সেটি অনলাইনে পাওয়া যাচ্ছে না। নতুন করে নিবন্ধন করাতে হচ্ছে। সন্তানদের জন্ম নিবন্ধন করাতে গিয়ে বাবা-মায়ের জন্ম সনদ তৈরি, সংশোধন করতে হচ্ছে। কারও বাংলায় সনদ থাকলেও ইংরেজিতে নেই। ইংরেজি থাকলে বাংলা করা নেই। বর্তমান জন্মনিবন্ধন পদ্ধতি নিয়ে ধারণার অভাব ও প্রয়োজনীয় নথিপত্র জোগাড় করতে না পারাসহ নানা সমস্যায় ঘুরপাক খাচ্ছেন জন্ম সনদ করতে যাওয়া ব্যক্তিরা।
 
এ সময় একাধিক ইউনিয়ন পরিষদের প্রশাসনিক কর্মকর্তা (সচিব) জানান, দির্ঘদিন ধরে অনেক নতুন ও সংশোধনী জন্মনিবন্ধনের আবেদন করা হয়েছে। আবেদনগুলো অনুমোদন (এপ্রুভ) দেয়নি উপজেলা পরিষদের সাবেক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ জাফর সাদিক চৌধুরী। তিনি জন্মনিবন্ধনের কোন কাজই করতেন না। 

বাংলাদেশ ইউনিয়ন প্রশাসনিক কর্মকর্তা সমিতি পাংশা শাখার সভাপতি ও যশাই ইউনিয়ন পরিষধেস প্রশাসনিক কর্মকর্তা (সচিব) মো. শাহিনুর রহমান বলেন, উপজেলার ১০ ইউনিয়নের প্রায় ২ হাজার ৬১২টি জন্মনিবন্ধনের আবেদন অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। সাবেক ইউএনও জন্মনিবন্ধনের কোন কাজই করেনি। তিনি গত ১১ সেপ্টেম্বর বদলি হয়ে নারায়নগঞ্জ সদর উপজেলায় গেছেন। গতকাল (মঙ্গলবার) উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও ভারপ্রাপ্ত উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মাসুদুর রহমান রুবেল স্যারের সাথে এ বিষয়ে কথা হয়েছে। 

তিনিও জন্মনিবন্ধনের কাজ করতে চাইছেন না। তিনি বলেছেন, নতুন ইউএনও আসলে তিনি এসব কাজ করবেন। বর্তমানে স্কুলে শিক্ষার্থীদের রেজিষ্ট্রেশনের জন্য জন্মনিবন্ধন সদন প্রয়োজন হচ্ছে। আবেদকারীরা ইউনিয়ন পরিষদে ঘুরে ঘুরে ভোগান্তি স্বীকার হচ্ছেন। অনেক অভিভাক আমাদের সাথে অসদাচরণ করছেন। বিষয়টি নিয়ে আমরাও (সচিব) বিকাপে পড়ে আছি।

জন্মনিবন্ধন জটিলতায় উপজেলা পরিষদে সরিষা ইউনিয়ন থেকে আসা বহলাডাঙ্গা উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মো. রিফাত হোসেন বলেন, নবম শ্রেনিতে রেজিষ্ট্রেশনের জন্য আমার জন্ম নিবন্ধন ডিজিটাল করতে দিয়েছি প্রায় দুই মাস হয়েছে। দুই মাসে প্রায় ৬-৭ বার উপজেলায় এসেছি। এখন পর্যন্ত আমার নিবন্ধন হয়নি। সরিষা থেকে আশা যাওয়া করতে মোটরসাইকেলে এক লিটার করে তেল লাগে। তাতে আমার এই পর্যন্ত প্রায় এক হাজার টাকার বেশি খরচ হয়েছে।

রিয়া খাতুন নামের এক নারী বলেন, আমার ছেলের স্কুলে ভর্তির জন্য জন্মনিবন্ধন করতে হবে। ছেলের নিবন্ধন করতে গিয়ে জানতে পারি ছেলেব বাবার জন্মনিবন্ধন ডিজিটাল করতে হবে। পরে ছেলের বাবার জন্মনিবন্ধন ডিজিটাল করতে দিয়েছি প্রায় ১০ দিন। এখনো হয়নি।

উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও ভারপ্রাপ্ত উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মাসুদুর রহমান রুবেল বলেন, ইউএনওদের এখন অনেক দায়ীত্ব। যে যে কাজ গুলো অগ্রাধিকার ভিত্তিতে করা প্রয়োজন। সে কাজগুলো আগে করছি। এর পরে যখন সময় পাচ্ছি, তখন জন্মনিবন্ধনের কাজ করছি। বিষয়টি খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে সমাধান করা সম্ভব করা। পরবর্তী ইউএনও আসলে তিনি বিষয়টি দেখবেন। 

সংশ্লিষ্ট সংবাদ

মন্তব্য