ফরিদপুরের চরভদ্রাসনে অষ্টম শ্রেণির এক মাদ্রাসা শিক্ষার্থী বাল্যবিয়ের শিকার হয়েছে। ঘটনাটি ঘটেছে উপজেলা সদর ইউনিয়নের টিলারচর এলাকার কেএমডাঙ্গী গ্রামে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ওই গ্রামের সৌদি আরব প্রবাসী মো. মোয়াজ্জেম খান এর অষ্টম শ্রেণি পড়ুয়া ১৬ বছর বয়সী মেয়েকে পার্শ্ববর্তী সদরপুর উপজেলার কাজী ডাঙ্গী গ্রামের এক সৌদি আরব প্রবাসীর সাথে বাল্য বিয়ে দেয়ার প্রস্তুতি চলছে।মাদ্রাসা সূত্রে জানা গেছে, ওই মেয়েটি এ বছরের ৮ মে উপজেলার ছনের মসজিদ মোড় সংলগ্ন ‘ইকরা ইসলামিয়া মহিলা মাদ্রাসায় ‘কিতাব খানার জামাতে না্হবেমির শ্রেণিতে ভর্তি হয়।
পরবর্তীতে সে গত ৩১ আগষ্ট ২০২৩ইং মাদ্রাসায় পড়াশুনা বন্ধ করে বাড়িতে চলে আসে। এদিকে ভর্তি ফরমে জন্ম সনদ নাম্বার অনুযায়ী মেয়েটির ১৬ বছর উল্লেখ করা হয়।
বুধবার দুপুরে সরজিমনে এমকে ডাঙ্গী গ্রামের টিলারচর এলাকায় মেয়েটির বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, প্রধান রাস্তা থেকে মেয়ের বাড়ি পর্যন্ত দুই পাশে আলোকসজ্জা দিয়ে বিয়ে বাড়ির গেট বানানো হচ্ছে এবং শুক্রবারে বিবাহ সম্পূর্ণ হবে বলে জানা যায়। মেয়েকে বাল্য বিবাহ দেয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে মেয়েটির বাবা মো. মোয়াজ্জেম খান বলেন, আমার মেয়ের জন্ম নিবন্ধনে ১৮ বছর পূর্ণ হয়েছে।
তাই আমরা মেয়েকে বিয়ে দিচ্ছি। আপনি এ ব্যাপারে চেয়ারম্যানের সাথে কথা বলেন। এই বিষয়ে ওই ইউনিয়নের ইউপি’ চেয়ারম্যান মো. আজাদ খান কথা হলে তিনি বলেন, মেয়ের বয়স ১৮ হয়েছে। তাছাড়া আপনাদের সমস্যা কি বিয়ে দিলে, কিসের জন্য আমাকে ফোন দিয়েছে, আমাকে ফোন দিবে ইউএন ও থানার ওসি, এই নিয়ে আপনাদের মাথা ব্যাথা কেন। এক পর্যায়ে প্রথমে পরিচয় দেয়ার পরেও আবার পরিচয় জানতে চেয়ে হুংকার দেন। ১৮ বছর কি ভাবে হলো জানতে চাইলে তিনি বলেন, জন্ম নিবন্ধন করি আমি, কি ভাবে ১৮ বছর করা যায় সেটা আমি জানি।
আপনাদের কাছ থেকে শিখতে হবে না। এ বিষয়ে ওই মাদ্রাসা প্রিন্সিপাল মুফতি মইন বলেন, মেয়েটি এ বছরের মে মাসে আমাদের মাদ্রাসায় ‘কিতাব খানার জামাতে নাহবেমির’ শ্রেনিতে ভর্তি হয়। মেয়েটি মাদ্রাসায় তিন মাস পড়াশুনা করে হঠাৎ করে মাদ্রাসায় আসা বন্ধ করে দেয়। মাদ্রাসায় ভর্তি ফরমে মেয়েটির জন্মসনদ নাম্বার অনুযায়ী তার বর্তমানে ১৬ বছর চলছে এবং তার মায়ের কথা অনুযায়ী মেয়ের বয়স ১৮ হয়নি।
এই বিষয়ে চরভদ্রাসন উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা মেহেদি মোর্সেদ বলেন, এই বিষয়ে আমার জানা নেই, তবে আমি খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নিব।
এ ব্যাপারে উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা শারমিন আক্তার ও উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা দেওয়ান মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর বলেন, বাল্যবিয়ের বিষয়টি আমাদের জানা ছিল না। আমরা আপনাদের কাছ থেকে এখন বাল্যবিয়ের বিষয়টি জানলাম। আমরা বাল্যবিয়ে বন্ধে বদ্ধপরিকর। আমরা খবর নিয়ে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করব।
মন্তব্য