নলছিটির অধিকাংশ ইউপি চেয়ারম্যান আত্নগোপনে

  • মশিউর রহমান রাসেল,ঝালকাঠি প্রতিনিধি:
  • বৃহস্পতিবার, ০৩ অক্টোবর ২০২৪ ০২:১০:০০
  • কপি লিঙ্ক

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর নলছিটি উপজেলার ১০টি ইউনিয়নের মধ্যে অধিকাংশ  ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানরা এখনও আত্মগোপনে রয়েছেন। এতে নাগরিক সেবা ও সুবিধাসহ দাপ্তরিক সেবা কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। কয়েকজন চেয়ারম্যানের কার্যালয়ের সামনে তালা ঝুলতে দেখা গেছে।

স্থানীয়রা বলেছেন, উপজেলার সব ইউপি চেয়ারম্যান আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল পদ পদবিধারী নেতা বা সমর্থক ছিলেন। এক মাসেরও বেশি সময় তারা পরিষদে অনুপস্থিত। এতে নাগরিক সেবা মারাত্মক ব্যাহত হচ্ছে। জনগণ নাগরিকসেবাসহ নানা প্রয়োজনে এসে তাদের না পেয়ে হতাশ হয়ে বাড়ি ফিরছেন। দিন দিন ভোগান্তির মাত্রা আরও বাড়ছে। গ্রাম্য সালিশ হচ্ছে না, ট্রেড লাইসেন্স, নাগরিক সনদ, ওয়ারিশ সনদ পেতে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। 

৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার বিপ্লবের পর কুলকাঠি, সুবিদপুর, মোল্লারহাট সহ অনেক ইউপি চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে হয়েছে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল। অনেকে আসার চেস্টা করেও সাধারন জনগনের জনরোষে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছেন।

এ অবস্থায় আওয়ামীপন্থি বিনা ভোটে নির্বাচিত চেয়ারম্যানদের গেজেট দ্রুত বাতিল করে প্রশাসক নিয়োগ দিয়ে পরিষদ পুরোদমে সচল করার দাবি জানিয়েছেন সাধারণ মানুষ।

এবিষয়ে মোল্লারহাট ইউনিয়ন বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ফিরোজ জোমাদ্দার  বলেন ফ্যাসিষ্ট স্বৈরাচার হাসিনার রাতের ভোটে হওয়া অবৈধ ইউপি চেয়ারম্যানদের গেজেট অতিসত্বর বাতিল করে প্রশাসক নিয়োগ দিয়ে জনগনের সেবা কার্যক্রম স্বাভাবিক রাখা হোক। কারন এসব ইউপি সদস্য আওয়ামী স্বৈরাচারের দোসর। তারা স্বপদে ফিরলে আবার বিভিন্ন রকম ষড়যন্ত্র করে দেশকে অস্থিতিশীল করার পায়তারা চালাবে।

সুবিদপুর ইউনিয়নের বিএনপির নেতারা বলেন। রাতের ভোটের চেয়ারম্যানদের দ্রুত অপসারণ করা হোক। অন্যথায় আমরা ১৯৭১সালের পরে, দ্বিতীয় বার হাজারো ছাত্রজনতার প্রাণের বিনিময়ে যে স্বাধীনতা ফিরে পেয়েছি। সেই স্বাধীনতা ম্লান করতে এসব ইউপি চেয়ারম্যান ও সদস্যরা ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হতে পারে বলে তিনি শঙ্কা প্রকাশ করেন। তিনি আরো বলেন বিগত ১৭ বছর ধরে স্বৈরাচার ফ্যাসিষ্ট হাসিনা যে বীজ রোপন করে গেছে, তা সমূলে উৎপাটন না করা পর্যন্ত পূর্ন স্বাধীনতার স্বাদ আমরা গ্রহণ করতে পারবো না। 

সিদ্ধকাঠি ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারন সম্পাদক রিয়াজ হোসেন বলেন।  সিদ্ধকাঠি ইউপি চেয়ারম্যান কাজী ফুয়াদ হত্যা মামলার আসামী। তিনি জেল হাজত থেকে জামিনে বের হযে পুনরায় গ্রেফতার আতঙ্কে এলাকা ছেড়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। ৫ তারিখের পরে তাকে কোথাও দেখা যায়নি ও পরিষদে তিনি অনুপস্থিত রয়েছেন। জনসাধারণের সেবা কার্যক্রম স্বাভাবিক রাখতে দ্রুত প্রশাসক নিয়োগের জোর দাবী জানাচ্ছি। 

কুলকাঠি ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক দলের আহবায়ক কামাল মল্লিক বলেন। বাচ্চু চেয়ারম্যান ইউনিয়ন পরিষদকে আওয়ামী কার্যালয় হিসেবে পরিচালিত করেছেন এতদিন। সেখান থেকে বিভিন্ন অপকর্মের নির্দেশনা দিতেন। তার বিরুদ্ধে ধর্ষণ,লুন্ঠন,দূর্নীতিসহ বিভিন্ন অভিযোগ থাকায়। এলাকার জনরোষের মুখে পালাতে বাধ্য হয়েছেন। আমরা এলাকার নাগরিক সুবিধা স্বাভাবিক রাখতে সরকারে প্রতিনিধি নিয়োগের দাবী জানাচ্ছি। 

সূত্রে জানা যায় ভৈরবপাশা ইউপি চেয়ারম্যান আবদুল হক শারিরীক ভাবে দীর্ঘদিন অসুস্থ থাকায় তার দায়িত্ব পালন করেন একজন প্যানেল চেয়ারম্যান।  কিন্ত ৫ তারিখের পর প্যানেল চেয়ারম্যান ও আওয়ামী পদধারী হওয়ায় পরেছেন জনরোষের মুখে প্যানেল চেয়ারম্যানই যাচ্ছেন পরিষদে। তবে তার মুঠোফোনে কল দিলে রিসিভ করেননি। 

তবে এ বিষয়ে মুঠোফোনে জানতে চাইলে সুবিদপুরের চেয়ারম্যান আঃ গফফার খান জানান আমি এলাকায় আছি। মাঝে মাঝে আমার ব্যাক্তিগত অফিসে বসে কার্যক্রম পরিচালনা করি। 

তবে এ বিষয়ে সুবিদপুরের স্থানীয় লোকজন জানান তার এই কথা অসত্য তিনি কোন রকম কার্যক্রম পরিচালনা করছেন না। তিনি এলাকায় আসার চেস্টা করেও স্থানীয় ছাত্র-জনতার তোপের মুখে পালিয়ে যান।

মোল্লারহাট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মাহবুবুর রহমান সেন্টু মুঠোফোনে জানান, আমি ৫ তারিখের পরে পরিষদে যাইনি। তবে বিধি মোতাবেক নাগরিক সেবা কার্যক্রম চলছে।

রানাপাশা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোঃ শাহজাহান হাওলাদার মুঠোফোনে জানান। আমি গত ৫ আগষ্ট থেকে এলাকায় যাইনি।  কারন জানতে চাইলে বলেন এলাকার পরিবেশ আমার জন্য অনুকূলে না তাই যাইনি।  তবে প্যানেল চেয়ারম্যান দায়িত্ব পালন করছেন।

নাচনমহল ইউপি চেয়ারম্যান সিরাজুল ইসলাম বলেন,  ৫ তারিখে পরে আমি পরিষদে যাইনি।  কার্যক্রম কিভাবে চলে জানতে চাইলে তিনি জানান প্যানেল চেয়ারম্যান পরিচালনা করেন।

কুশঙ্গল,  ভৈরবপাশা, দপদপিয়া, কুলকাঠি, মগড় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানদের মুঠোফোন বন্ধ থাকায় তাদের সাথে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।

আত্মগোপনে থাকা চেয়ারম্যানরা হলেন-

সুবিদপুরের আবদুল গফফার খান, নাচনমহল ইউপি চেয়ারম্যান সিরাজুল ইসলাম সেলিম, মগর ইউপির এনামুল হক শাহীন, কুলকাঠির এইচ এম আক্তারুজ্জামান বাচ্চু, রানাপাশার শাহজাহান হাওলাদার, মোল্লারহাটের কে এম মাহবুবুর রহমান সেন্টু, ভৈরবপাশার আবদুল হক, সিদ্ধকাঠির কাজী জেসমিন আক্তার।

কুশঙ্গল ও দপদপিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানদের আমাবস্যার চাঁদের মতোই মাঝে মাঝে দেখা যায় বলে স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে।

বেশিরভাগ ইউপি সদস্য (মেম্বার) ৫ আগষ্টের পরে পলাতক রয়েছেন। যারা এলাকায় অবস্থান করছেন তারাও যাচ্ছেন না ইউনিয়ন পরিষদে।

সরকার পতনের পর সবশেষ উপজেলা পরিষদের মাসিক সমন্বয় সভায়ও কোনো ইউপি চেয়ারম্যান উপস্থিত ছিলেন না।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. নজরুল ইসলাম বলেন, জনদুর্ভোগের বিষয়টি চিন্তা করেই সব ইউনিয়নে জন্মনিবন্ধন সেবা কার্যক্রম চালু রাখতে একজন করে কর্মকর্তাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। সাময়িক কিছুটা দুর্ভোগ হচ্ছে। প্রশাসন জনসাধারণের পাশে আছেন। শিগগিরই উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা নেবে।

এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক আশরাফুর রহমান বলেন, এ বিষয়টি আমাদের নজরে আছে। শিগগির সিদ্ধান্ত আসবে।

সংশ্লিষ্ট সংবাদ

মন্তব্য