পল্লীকবি জসীম উদ্দীনের ১২০তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে প্রতিবারের ন্যায় এবারও ফরিদপুরে শুরু হলো ১৯ দিনব্যাপী জসীম পল্লী মেলা। শুক্রবার (২ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে জেলা সদরের অম্বিকাপুরে কবির নিজ বাড়ির সামনে কুমার নদের পাড়ে এ মেলার উদ্বোধন করা হয়েছে। এ মেলা চলবে ২১ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। প্রতি বছর ফরিদপুর জেলা প্রশাসন ও জসীম ফাউন্ডেশনের যৌথ উদ্যোগে এই মেলার আয়োজন করা হয়।
ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক ও ফরিদপুর জসীম ফাউন্ডেশনের সভাপতি মো. কামরুল আহসান তালুকদারের সভাপতিত্বে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, পল্লীকবি জসীম উদদীনের ছোট জামাতা ও প্রধানমন্ত্রীর বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদবিষয়ক উপদেষ্টা ড. তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী বীর বিক্রম।
মেলার উদ্বোধনের পর প্রধান অতিথির বক্তৃতায় ড. তৌফিক-ই-এলাহী বলেন, 'আপনারা যদি কবি জসীম উদ্দীনকে জানতে চান তবে তার বই পড়তে হবে। তাঁর কৃতকর্মগুলো সম্পর্কে জানতে চেষ্টা করতে হবে। তাঁর সৃষ্টি গুলোকে জানতে হবে, কবি'র বইগুলো পড়তে হবে।'
কবি'র জামাতা আরও বলেন, 'প্রচারের অভাবে পল্লীকবি জসীম উদ্দীন সম্পর্কে নতুন প্রজন্ম তেমন কিছু জানেনা, তাঁকে তারা ভুলতে বসেছে। নতুন প্রজন্ম আজকাল বই পড়াও ভুলে যাচ্ছে।'
ড. তৌফিক নতুন প্রজন্মকে বই পড়ার প্রতি আহবান জানিয়ে বলেন, জসীম উদ্দীনের প্রতি আগ্রহ সৃষ্টি করতে হবে। তা না হলে এক সময় নতুন প্রজন্ম জসীম উদ্দীনকে ভুলে যাবে।
উক্ত অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, ফরিদপুর-৩ আসনের সংসদ সদস্য ও ফরিদপুর জেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা সদস্য এ কে আজাদ, ফরিদপুর-২ আসনের সংসদ সদস্য শাহদাব আকবর লাবু চৌধুরী, ফরিদপুরের পুলিশ সুপার মো. মোর্শেদ আলম , জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শামীম হক, সাধারণ সম্পাদক শাহ্ মো. ইশতিয়াক আরিফ, ফরিদপুর পৌর মেয়র অমিতাভ বোস, সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুর রাজ্জাক মোল্লা, সালথা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোঃ ওয়াদুদ মাতুব্বর প্রমুখ।
এছাড়া অন্যান্য অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন- ফরিদপুর জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি মো. ফারুক হোসেন, ফরিদপুর পৌর আওয়ামী লীগের আহবায়ক মনিরুল হাসান মিঠু, ফরিদপুর জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা এডভোকেট সুবল চন্দ্র সাহা, জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শওকত আলী জাহিদ, ফরিদপুর পৌরসভার সাবেক মেয়র শেখ মাহাতাব আলী মেধু, সাবেক জেলা আওয়ামী লীগনেতা এডভোকেট বদিউজ্জামাল বাবুল, ফরিদপুর পৌর আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি নাজমুল ইসলাম লেভিসহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ।
এছাড়া বরেণ্য অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন- কবি পুত্র ড. জামাল আনোয়ার, খুরশিদ আনোয়ার, কবি কন্যা আসমা জসীম উদ্দীন তৌফিক।
এবারের জসীম পল্লী মেলা সম্পর্কে ফরিদপুর জেলা প্রশাসক ও জসীম ফাউন্ডেশনের সভাপতি জানান, এ মেলায় বিভিন্ন স্টলে লোকজ বিভিন্ন চারু ও কারুপণ্যের বিপণনের ব্যবস্থা রয়েছে। এ বছর মেলায় প্রায় দুইশত স্টল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া প্রতিদিন বিকেলে মেলার মাঠ প্রাঙ্গণে জসীম মঞ্চে গান, নাচ, নাটকসহ বিভিন্ন লোকজ সংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন তো থাকছেই। যাতে ফরিদপুর এবং ফরিদপুরের বাইরের সংস্কৃতিক দলগুলো অংশগ্রহণ করবে।
এছাড়া মেলায় রয়েছে হস্ত, মৃৎ, বাঁশ ও বেত শিল্পসহ গ্রামীণ মানুষের ব্যবহৃত নিত্যদিনের জিনিসপত্র। শিশু-কিশোরদের বিনোদনের জন্য রয়েছে সার্কাস, জাদু, নাগরদোলাসহ বিভিন্ন রকমের রাইডস।
উল্লেখ্য, ১৯৮৮ সাল থেকে জসীম মেলা অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। ওই বছর ফরিদপুর সাহিত্য পরিষদের উদ্যোগে ১ জানুয়ারি পল্লীকবি'র জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে এ মেলার আয়োজন করা হয়। মেলার ব্যাপ্তিকাল প্রথমে তিন দিন ছিল। পরে সাত দিন, পনেরো দিন এবং পরবর্তীতে এক মাসব্যাপী এ মেলার আয়োজন হয়। ১৯৯১ সালে তৎকালীন রাষ্ট্রপতি বিচারপতি সাহাবুদ্দিন আহমেদ জসীম পল্লী মেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এলে মেলাটি'র গুরুত্ব বেড়ে যায়। পরে জেলা প্রশাসন ও জসীম ফাউন্ডেশন এ মেলা আয়োজন শুরু করে। সেই ধারাবাহিকতা এখন পর্যন্ত এই মেলা আয়োজিত হয়ে আসছে। প্রতি বছর পল্লী কবি'র জন্মদিন (১ জানুয়ারি) থেকে মেলা শুরু হলেও এ বছর দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের কারণে মেলার তারিখ পিছিয়ে দেয়া হয়েছে।
মন্তব্য