মেয়াদোত্তীর্ণ জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় (জবি) শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক এস এম আকতার হোসাইনের বিরুদ্ধে মেডিকেলে ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁসের অভিযোগ উঠেছে। নিজের মেসেঞ্জারের মাধ্যমে অজ্ঞাত এক ব্যক্তিকে এ প্রশ্নপত্র ও উত্তর দিতে দেখা যায়।
প্রশ্নফাঁসের মেসেঞ্জারের স্ক্রিণ রেকর্ডের ভিডিওসহ সকল তথ্য প্রমাণ এই প্রতিবেদকের হাতে এসেছে। মেসেঞ্জার রেকর্ডে দেখা যায়, জবি ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক এসএম আকতার হোসাইন তার নিজের মেসেঞ্জার থেকে একজনকে মেডিক্যাল ভর্তি পরীক্ষার উত্তরপত্র সরবরাহ করছেন। ওই উত্তরপত্রের অধিকাংশ ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষের মেডিক্যাল ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নপত্রের সাথে মিলে গেছে।
মেসেঞ্জারে দেখা যায়, যিনি উত্তরপত্র নিচ্ছেন তিনি ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আকতারকে বলছেন, 'সব দিছেন ভাই?' জবাবে আকতার হোসাইন বলেন, 'হ্যা, কেউ কে দিয়ো না আবার।' এরপর স্কিণ রেকর্ডে মেসেঞ্জার থেকে আকতার হোসাইনের ফেসবুক প্রোফাইলে ঢুকে আইডির সত্যতাও দেখা গেছে।
এদিকে প্রশ্নফাঁসের বিষয়টি অনুসন্ধানে এসএম আকতার হোসাইনের মামাতো ভাই পরিচয়ে মাদারীপুরের কাঁকন মিয়ার একটি অডিও ক্লিপও এ প্রতিবেদকের হাতে এসেছে। তিনি একজন অজ্ঞাত ব্যক্তিকে ভর্তি পরীক্ষায় টিকিয়ে দেয়ার গ্যারান্টি দেন। কাঁকন মিয়া বলেন, 'এখানে আমি আকতারের আপন মামাতো ভাই। আকতারও এটা বলেছে। আপনিও বলেছেন যে ভাই আপনি যে কয়টা কাজ দিয়েছেন একটাও মিস হয়না।' এ বিষয়ে কাকন মিয়ার কাছে জানতে চাইলে তিনি গণমাধ্যমকে জানান, 'আপনি ওই যার পরিচিত তার কাছে শোনেন। আমার কাছে জানার কি আছে।'
শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদকের নেতিবাচক এরুপ সংশ্লিষ্টতার কারনে ক্ষোভ প্রকাশ করেন অন্যান্য নেতারা। জবি ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি মিথুন বাড়ৈ বলেন, জবি ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক এসএম আকতার হোসাইন দীর্ঘদিন বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র জালিয়াতি ও অপকর্মের সাথে জড়িত।
জবি ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুল রায়হান বলেন, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ কখনো অন্যায়কে প্রশ্রয় দেয় না। প্রশ্নফাঁসের মতো এই গুরুতর অভিযোগে সাংগঠনিক ব্যবস্থাসহ রাষ্ট্র বিরোধী এ কাজের জন্য আইনগত ব্যবস্থা নেয়া উচিত।
জবি ছাত্রলীগের আরেক সাংগঠনিক সম্পাদক শেখ রাসেল বলেন, আশা করছি সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ গঠনতন্ত্র অনুযায়ী সাংগঠনিক ব্যবস্থা নিবেন। আরেক সাংগঠনিক সম্পাদক মফিজুর রহমান হামিম বলেন, কেউ যদি ছাত্রলীগের নাম ব্যবহার করে ছাত্রলীগকে কলুষিত করে আশা করছি এর যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া হবে।
তবে এসব কর্মকাণ্ডের জড়িত থাকার বিষয় অস্বীকার করে জবি শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক এম এম আকতার হোসাইন বলেছেন, 'এটা সম্পূর্ণ মিথ্যা, বানোয়াট ভিত্তিহীন। এটা উদ্দেশ্য প্রণোদিত।'
কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালি আসিফ ইনান বলেন, প্রশ্নফাসের অভিযোগ একটি গুরুতর বিষয়। আমরা যদি কারো বিরুদ্ধে এমন সংশ্লিষ্টতা প্রমান পাই তাহলে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেব। জবি ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদকের প্রশ্নফাঁসের বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি আরো বলেন, আমি বিষয়টি অবগত নই। যদি কোন অপরাধে যুক্ত থাকে তবে অপরাধীর স্থান ছাত্রলীগে নেই।
কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি সভাপতি সাদ্দাম হোসাইন বলেন, যেকোনো অনৈতিক কর্মকান্ডের বিরুদ্ধে আমাদের কঠোর অবস্থান। অনৈতিক ও গঠনতন্ত্র বিরোধী, শিক্ষার্থীদের স্বার্থ ও আদর্শ বিরোধী কর্মকান্ডে যুক্ত থাকলে অবশ্যই সংগঠন তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে।
উল্লেখ্য, ২০২২ সালের পহেলা জানুয়ারী ইব্রাহীম ফরাজীকে সভাপতি ও এস এম আকতারকে সাধারণ সম্পাদক ঘোষণা করে জবি ছাত্রলীগের কমিটি গঠন হয়। এরপর ক্যাম্পাসের সকল টেন্ডার নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নেয়া, ঠিকাদারদের চেক আটকে দেয়া, শিক্ষক-কর্মকর্তাদের লাঞ্চনা, রিসোর্টে নারী কর্মী নিয়ে কেলেঙ্কারি ও সদরঘাটে চাঁদাবাজিসহ নানা অভিযোগে ৬ মাস পরেই এ কমিটি স্থগিত হয়ে যায়। পরে কমিটি ফিরে পেলেও দেড় বছর ধরে মেয়াদোত্তীর্ণ এ কমিটির নতুন কমিটি হয়নি।
মন্তব্য