আজ গাজীপুর সিটি নির্বাচন, ভোটের লড়াই দেখতে পুরো দেশের চোখ এই শিল্পনগরীতে

  • অনলাইন
  • বৃহস্পতিবার, ২৫ মে ২০২৩ ০২:০৫:০০
  • কপি লিঙ্ক

নির্বাচন কমিশনে (ইসি) নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল ৪১টি। এর মধ্যে গাজীপুরের ভোটে মেয়র পদে প্রার্থী দিয়েছে মাত্র পাঁচটি দল। বিএনপিসহ তাদের মিত্ররা রয়েছে ভোট বর্জনে। সংসদের প্রধান বিরোধী দল জাতীয় পার্টি প্রার্থী দিলেও প্রচারে দেখা যায়নি কেন্দ্রীয় নেতাদের। তবু এই নির্বাচন ঘিরে ভরপুর উত্তেজনা। তিন স্বতন্ত্র প্রার্থীসহ আজ বৃহস্পতিবার ভোটের মাঠে থাকছেন আট মেয়র প্রার্থী। তাঁদের ভোটের লড়াই দেখতে গাজীপুর তো বটেই, পুরো দেশের চোখ এই শিল্পনগরীতে।

মেয়র পদে আটজন লড়লেও আলোচনার পুরোভাগে রয়েছেন আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকার প্রার্থী আজমত উল্লা খান এবং সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলমের মা স্বতন্ত্র প্রার্থী টেবিল ঘড়ি প্রতীকের জায়েদা খাতুন। অতীতে কোনো নির্বাচনী অভিজ্ঞতা না থাকলেও জায়েদা তাঁর ছেলের ছায়া হয়ে নির্বাচন জমিয়েছেন।

এ ভোট ঘিরে চাপা উত্তেজনা আর উৎকণ্ঠা থাকলেও ইসির শীর্ষ কর্তারা মনে করছেন, এতকিছুর পরও এই নির্বাচন একতরফা খেতাব পায়নি। এটাই বড় সফলতা। ফলে আজ ভোটকেন্দ্রে কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা দেখতে রাজি নয় সাংবিধানিক এই প্রতিষ্ঠানটি। প্রচারের শুরুতে আচরণবিধি লঙ্ঘন ঠেকাতে মন্ত্রিসভার একাধিক সদস্যকে সতর্ক করা, ক্ষমতাসীন দলের মেয়র প্রার্থীকে ঢাকায় ডেকে এনে সবক দেওয়া এবং সর্বশেষ ক্ষমতাসীন দল সমর্থিত এক কাউন্সিলর প্রার্থীর প্রার্থিতা বাতিলের মতো কঠোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে ইসি।

একইভাবে আজ ভোটকেন্দ্রের যে কোনো অনিয়ম ঠেকাতে ইসির সর্বোচ্চ প্রস্তুতি রয়েছে। ৪৮০ কেন্দ্রের সব ক’টিতেই লাগানো হয়েছে সিসি ক্যামেরা। ঢাকায় নির্বাচন ভবনে নির্বাচন পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র খোলা হয়েছে। এখানে বসে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়ালসহ শীর্ষ কর্তারা গাইবান্ধা উপনির্বাচনের মতোই ভোট তদারকিতে থাকবেন।

জাতীয় নির্বাচনের আগে এই ভোটকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়ার কথা বলছেন সিইসিসহ একাধিক নির্বাচন কমিশনার। এই ভোটের দিকে আন্তর্জাতিক মহলেরও চোখ রয়েছে বলে তাদের মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সতর্ক করা হয়েছে। নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীর দাবি করেছেন, প্রচারের শুরুতে প্রার্থীদের মধ্যে আচরণবিধি পালনে কিছুটা শিথিল মনোভাব দেখা গিয়েছিল। তবে ক্ষমতাসীন দলের মেয়র প্রার্থী আজমত উল্লা খান এবং মন্ত্রিসভার একাধিক সদস্যকে সতর্ক চিঠি দেওয়ার পর পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে। সর্বশেষ ভোটের আগের দিন গতকাল বুধবার এক কাউন্সিলর প্রার্থীর প্রার্থিতাও বাতিল করা হয়েছে।

যদিও সুশসানের জন্য নাগরিক-সুজনের দাবি, এই নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হলেও গ্রহণযোগ্যতা প্রশ্নবিদ্ধ। বিএনপি নির্বাচনে অংশ না নেওয়ায় এ প্রেক্ষাপট তৈরি হয়েছে। সুজন সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, দেশের নির্বাচনী ইতিহাসে আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগে কোনো প্রার্থীর প্রার্থিতা বাতিলের সিদ্ধান্ত এটাই প্রথম। এ জন্য ইসিকে অবশ্যই সাধুবাদ জানাতে হয়। ইসির এই কঠোর সিদ্ধান্তকে ইতিবাচক আখ্যায়িত করে তিনি বলেন, আইনের কঠোর প্রয়োগের ধারাবাহিকতা থাকলেই কমিশনের ওপর সাধারণ মানুষের আস্থা ফিরে আসতে পারে। গাইবান্ধা উপনির্বাচনের পর গাজীপুরের এই ঘটনা অবশ্যই দেশের নির্বাচন ব্যবস্থায় ইতিবাচক ধারা বয়ে আনতে পারে।

ইসি সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, গাজীপুর দেশের সবচেয়ে বড় সিটি করপোরেশন। ভোটার সংখ্যা ১১ লাখ ৭৯ হাজার ৪৭৬ জন। এর  মধ্যে পুরুষ ৫ লাখ ৯২ হাজার ৭৬২ জন, নারী ৫ লাখ ৮৬ হাজার ৬৯৬ জন এবং তৃতীয় লিঙ্গের ১৮ জন। এই সিটিতে ৫৭টি সাধারণ ও ১৯টি সংরক্ষিত ওয়ার্ড আছে। কেন্দ্র ৪৮০ এবং ভোটকক্ষ ৩ হাজার ৪৯৭টি।

এর পর আরও চার সিটির ভোট থাকলেও কোনোটিরই গাজীপুরের ভোটার সংখ্যার কাছাকাছি নেই। দলীয় সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচনই সুষ্ঠু হয় না– এমন অভিযোগ তুলে স্থানীয় সরকার ও জাতীয় সংসদের ভোট বর্জনে রয়েছে বিএনপি। নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে দলটি ধারাবাহিক কর্মসূচিও পালন করছে। এমন পরিস্থিতিতে ইসির জন্য এই নির্বাচনকে ‘এসিড টেস্ট’ হিসেবে দেখা হচ্ছে। কমিশন নিজেও গাজীপুরের ভোটকে সংসদ নির্বাচনের আগে নিজেদের ‘স্টেজ রিহার্সেল’ হিসেবে মনে করছে। অন্যদিকে বিএনপির আন্দোলনের জবাবে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও তার মিত্রদের জন্যও এই ভোট গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এই নির্বাচনে কোনো অনিয়ম হলে জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে বিরোধী পক্ষের দাবির যৌক্তিকতা জোরালো হয়ে উঠবে। 

ইসি ঘোষিত রোডম্যাপ অনুযায়ী আগামী ডিসেম্বরের শেষ বা জানুয়ারির প্রথম দিকে জাতীয় নির্বাচন হবে। এর আগে খুলনা, বরিশাল, রাজশাহী ও সিলেট সিটির নির্বাচনই ইসির সামনে বড় ভোট। আস্থার সংকটে ভুগতে থাকা ইসিকে এসব নির্বাচনের মাধ্যমেই নিজেদের সক্ষমতা তুলে ধরতে হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।  

কাজী হাবিবুল আউয়ালের নেতৃত্বাধীন বর্তমান কমিশনের অধীনে এর আগে কুমিল্লা ও রংপুর সিটির ভোট হয়েছিল। পাশাপাশি বিএনপির পদত্যাগে শূন্য হওয়া ছয়টি সংসদীয় আসনসহ ৯টির উপনির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এর মধ্যে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগে গাইবান্ধা-৫ আসনের উপনির্বাচন বাতিল করে আলোচনায় আসে ইসি। ক্ষমতাসীন দলের পক্ষ থেকেও সমালোচনা শুনতে হয় কমিশনকে।
  
নির্বাচনের সার্বিক প্রস্তুতির কথা তুলে ধরে তিনি জানান, পাঁচ স্তরে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী মোতায়েন করে গাজীপুরকে নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে ফেলা হয়েছে।

গাজীপুরের পুলিশ কমিশনার মোল্যা নজরুল ইসলাম বলেন, গাজীপুরসহ পুরো বিশ্ব আমাদের দিকে তাকিয়ে আছে। নির্বাচন সুষ্ঠু করে আমরা তাঁদের দেখিয়ে দিতে চাই।

গত মঙ্গলবার ঢাকায় আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরও বলেছেন, গাজীপুর সিটির ভোট সুষ্ঠু হবে। সরকার এই নির্বাচনে কোনো হস্তক্ষেপ করবে না। নির্বাচন কমিশন নির্বাচন পরিচালনা করবে। অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন কীভাবে হয়, তা দেখিয়ে দেওয়া হবে। আগামী জাতীয় নির্বাচনও শান্তিপূর্ণ হবে। নির্বাচন দেখতে তিনি বিদেশি পর্যবেক্ষকদেরও আসার অনুরোধ জানান।

সংশ্লিষ্ট সংবাদ

মন্তব্য