শেষকৃত্য সম্পন্ন -বিদায় সৌমিত্র

  • মোঃ নাসির, বিশেষ প্রতিনিধি :
  • সোমবার, ১৬ নভেম্বর ২০২০ ০৩:২৫:০০
  • কপি লিঙ্ক

কিংবদন্তি অভিনেতা সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়কে চোখের জলে শেষবিদায় জানানো হলো। ১৫ নভেম্বর রোববার সন্ধ্যায় কলকাতার কেওড়াতলা মহাশ্মশানে পূর্ণ মর্যাদায় তার শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়েছে। এর আগে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকারের ঘোষণা অনুযায়ী তাকে গান ও স্যালুটে শ্রদ্ধা জানানো হয়।

রোববার সন্ধ্যায় কেওড়াতলা শ্মশানে শেষকৃত্য সম্পন্নের আগে সৌমিত্রের মরদেহ রবীন্দ্রসদনে নেওয়া হয়। সেখান থেকে নেওয়া হয় কেওড়াতলায়। হেঁটে শেষযাত্রায় অংশ নেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, বিমান বসু, রাজ চক্রবর্তী, দেব, কৌশিক সেনসহ সৌমিত্রের অসংখ্য ভক্ত-অনুরাগী।

রোববার দুপুর সোয়া ১২টার দিকে কলকাতার বেলভিউ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষনিঃশ্বাস ত্যাগ করেন বাংলা সিনেমার এই প্রবীণ মহাতারকা।

বেলা আড়াইটার দিকে বেলভিউ হাসপাতাল থেকে শববাহী যানে করে সৌমিত্রের মরদেহ তার গল্ফ গ্রিনের বাড়িতে নেওয়া হয়। সেখানে কিছুক্ষণ রাখার পর বেলা তিনটার দিকে টেকনিশিয়ান স্টুডিওতে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে শ্রদ্ধা জানান স্টুডিওপাড়ার অভিনেতা-অভিনেত্রী ও টেকনিশিয়ানরা।

বেলা সাড়ে তিনটা নাগাদ সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের মরদেহ রবীন্দ্রসদনে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে তাকে শ্রদ্ধা জানান বিশিষ্ট ব্যক্তিরা। এর পরই কেওড়াতলা মহাশ্মশানের উদ্দেশে পদযাত্রা শুরু হয়।

সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের অন্তিম যাত্রায় অভিনেতা, অভিনেত্রী, রাজনীতিবিদ, প্রশাসনিক কর্তারা ছাড়াও তার অসংখ্য অনুরাগী যোগ দেন। পদযাত্রার প্রতিটি পদে রবীন্দ্রসংগীত ও কবিতায় তাকে শ্রদ্ধা জানানো হয়। কেওড়াতলা মহাশ্মশানে নেওয়ার পর সেখানে সবাই তাকে শ্রদ্ধা জানান। তারপর দেওয়া হয় গান স্যালুট। পূর্ণ মর্যাদায় সম্পন্ন হয় সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের শেষকৃত্য।

করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে বর্ষীয়ান এই অভিনেতা গত ৬ অক্টোবর হাসপাতালে ভর্তি হন। এরপর কয়েক দফায় তার শারীরিক অবস্থার অবনতি ও উন্নতির খবর পাওয়া যায়। করোনা থেকে মুক্ত হয়েছিলেন সৌমিত্র। অন্যান্য জটিল রোগের কাছে পরাস্ত হয়ে রোববার পৃথিবী থেকে বিদায় নিলেন এই কিংবদন্তি।

সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় ১৯৩৫ সালে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি একাধারে ছিলেন প্রযোজক, গল্পকার, কবি, আবৃত্তিকার। মঞ্চেও দুর্দান্ত একজন অভিনেতা ছিলেন। পেশাজীবন শুরু করেছেন ভয়েস আর্টিস্ট হিসেবে। পরে সিনেমার জন্য ডাক পান ১৯৫৯ সালে, অস্কারজয়ী পরিচালক সত্যজিৎ রায়ের ‘অপুর সংসার’ সিনেমার জন্য। সেই ছবি দিয়েই অভিনয়জগতে পা রাখেন। এরপর তিনি সত্যজিৎ রায়ের ২৭টি সিনেমার ১৪টিতে অভিনয় করেছেন। তার অভিনীত চরিত্রগুলোর মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় ‘ফেলুদা’।

সত্যজিৎ ছাড়াও তিনি মৃণাল সেন, তপন সিংহ, অজয় করের মতো কালজয়ী নির্মাতাদের সঙ্গে কাজ করেছেন। তার নায়িকা হিসেবে দেখা গেছে সুচিত্রা সেন, সুপ্রিয়া দেবী, শর্মিলা ঠাকুর, অপর্ণা সেন, মাধবী মুখার্জি, তনুজাসহ অনেক কিংবদন্তি অভিনেত্রীকে।

ভারত সরকার সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়কে ২০০৪ সালে ‘পদ্মভূষণ’ ও ২০১২ সালে ‘দাদাসাহেব ফালকে পুরস্কার’ দিয়ে সম্মানিত করেছে।

সংশ্লিষ্ট সংবাদ

মন্তব্য