ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গায় শামীম কাজী নামে এক বেকার যুবককে সরকারি চাকরি দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে প্রতারণার মাধ্যমে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে মনোয়ারা ছালাম নামে এক সাবেক উপজেলা মহিলা ভাইস চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে।
অভিযুক্ত মনোয়ারা ছালাম উপজেলার সদর ইউনিয়নের বেজিডাঙ্গা গ্রামের মৃত. আব্দুস সালাম মুন্সীর স্ত্রী। তিনি উপজেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সভানেত্রী ও উপজেলা পরিষদের সাবেক মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান।
ভুক্তভোগী শামীম কাজী একই ইউনিয়নের নাওরা মিঠাপুর এলাকার কাজী আব্দুল হান্নানের ছেলে। টাকা দিয়ে প্রায় নয় বছরেও চাকরি না পেয়ে পাওনা টাকার জন্য দিনের পর দিন ধর্ণা দিচ্ছেন ভুক্তভোগী পরিবারটি। অনুনয় বিনয় করেও পাওনা টাকা না পেয়ে গত ২৫ আগস্ট মনোয়ারা ছালামের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর বোয়ালমারী ক্যাম্পের কোম্পানি কমান্ডারের নিকট লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন ভুক্তভোগীর পিতা কাজী আব্দুল হান্নান।
লিখিত অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, ২০১৬ সালের ১৫ মার্চ বেকার যুবক শামীম কাজীকে একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নৈশপ্রহরী পদে চাকরি দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে নগদ পাঁচ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নেয় মনোয়ারা ছালাম। টাকা দেয়ার প্রায় নয় বছর পরেও চাকরি না পেয়ে টাকার জন্য অনুনয় বিনয় করতে থাকেন ভুক্তভোগী শামীম কাজীর পরিবার। কিন্তু টাকা ফেরত না দিয়ে নানা রকম টালবাহানা করতে থাকেন মনোয়ারা ছালাম। এমনকি তৎকালীন সময়ে দলীয় পদ-পদবী ব্যবহার করে নানা রকম ভয়ভীতি ও হুমকি দেন তিনি।
ভুক্তভোগীর পিতা কাজী আব্দুল হান্নান বলেন, মনোয়ারা ছালাম মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগের বড় নেত্রী পরিচয় দিয়ে বলেন তৎকালীন এমপি (আব্দুর রহমান) মহোদয়ের সাথে তার গভীর সম্পর্ক। তিনি যা বলবেন এমপি মহোদয় তাই শোনেন। এই আশ্বাসে আমার ছেলেকে একটি সরকারি স্কুলের নৈশপ্রহরী পদে চাকরি দেওয়ার জন্য ছয় শতাংশ জমি ও একটি গাভী বিক্রি করে তাকে পাঁচ লক্ষ টাকা দেই। কিন্তু আজ পর্যন্ত সে আমার ছেলেকে চাকরিও দেয় না, টাকাও ফেরত দেয় না।
এদিকে ভুক্তভোগীর পিতা কাজী আব্দুল হান্নান বোয়ালমারী সেনা ক্যাম্পের নিকট অভিযোগ দিলে ক্যাম্পের দায়িত্বপ্রাপ্ত ওয়ারেন্ট অফিসার আবু জাফর বিষয়টি মীমাংসার জন্য স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানকে নির্দেশ দেন। পরবর্তীতে সদর ইউপি চেয়ারম্যান সোহরাব হোসেন বুলবুল বিষয়টি মীমাংসার জন্য মনোয়ারা ছালামকে ইউনিয়ন পরিষদে উপস্থিত হওয়ার জন্য নোটিশ প্রদান করেন। কিন্তু এতেই ইউপি চেয়ারম্যানকে নাজেহাল পরিস্থিতির স্বীকার হতে হয়। তিনি উপস্থিত না হয়ে বরং ইউপি চেয়ারম্যান সোহরাব হোসেনের বিরুদ্ধে জেলা প্রশাসকের নিকট মিথ্যা ও কাল্পনিক কাহিনী সাজিয়ে একটি চাঁদাবাজির অভিযোগ দাখিল করেন।
জানতে চাইলে আলফাডাঙ্গা সদর ইউপি চেয়ারম্যান সোহরাব হোসেন বুলবুল বলেন, বোয়ালমারী সেনা ক্যাম্পের ওয়ারেন্ট অফিসার বিষয়টি মীমাংসার জন্য আমাকে নির্দেশ দেন। পরবর্তীতে মীমাংসার জন্য উভয়পক্ষকে ইউনিয়ন পরিষদ থেকে নোটিশ করা হয়। কিন্তু মনোয়ারা ছালাম উপস্থিত না হয়ে আমার বিরুদ্ধে জেলা প্রশাসক মহোদয়ের নিকট মিথ্যা বানোয়াট চাঁদাবাজির অভিযোগ করেন।
এবিষয়ে অভিযুক্ত মনোয়ারা ছালামের সাথে যোগাযোগ করা হলে প্রথমে তিনি অভিযোগের বিষয়টি সম্পূর্ণ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন দাবী করেন। একপর্যায়ে তিনি বলেন, টাকা তৎকালীন এমপি (আব্দুর রহমান) মহোদয় নিয়েছেন। তবে তিনি লেনদেনের এই বিষয়টি জানেন বলে স্বীকার করেছেন।
মন্তব্য