রাজবাড়ীর মন্ত্রী, এমপি ও আওয়ামী লীগ নেতারা আত্মগোপনে 

  • অনলাইন
  • শুক্রবার, ০৯ আগস্ট ২০২৪ ০৯:০৮:০০
  • কপি লিঙ্ক

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মুখে ক্ষমতা ছেড়ে দেশ থেকে পালাতে হয় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে। এরপর থেকেই আত্মগোপনে আছেন রাজবাড়ীর মন্ত্রী, এমপি ও সাধারণ সম্পাদকসহ জেলার অনেক হাইপ্রোফাইল আওয়ামী লীগ নেতা। এসব নেতা এখন কোথায়, কীভাবে রয়েছেন তা জানেন না জেলাবাসী। এমনকি দলীয় কর্মীদের সঙ্গেও কোনো যোগাযোগ নেই তাদের।

জানা গেছে, রেলমন্ত্রী ও রাজবাড়ী-২ আসনের সংসদ সদস্য এবং জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. জিল্লুল হাকিম গত ১১ জুলাই সরকারি সফরে ভিয়েতনাম ও জাপান ভ্রমণের উদ্দেশে দেশত্যাগ করেন। তিনি ১৪ জুলাই পর্যন্ত ভিয়েতনামে থাকেন। এরপর তিনি ১৫ জুলাই থেকে ২৪ জুলাই পর্যন্ত জাপানে ছিলেন। জাপান সফর শেষে তিনি ২৫ জুলাই বাংলাদেশে আসেন। 

রেলমন্ত্রীর ভিয়েতনাম ও জাপান সফররত অবস্থায় দেশে কোটা আন্দোলন চলতে থাকে। সে সময় তিনি দেশে এসে রেলের ক্ষতি সম্পর্কে গণমাধ্যমে বিবৃতি দেন। কোটা আন্দোলনের সময় মন্ত্রী আর রাজবাড়ীতে আসেননি। সবশেষ তিনি ৫ জুলাই রাজবাড়ীতে এসেছিলেন।

এরপর গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার সরকারের পতন হয়। ওই সময় সারাদেশে বিভিন্ন মন্ত্রী, এমপি ও আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের বাড়িতে অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুর হয়। তেমনি রাজবাড়ীতেও চলে তাণ্ডব। বিক্ষুব্ধ জনতা পাংশা নারায়ণপুর এলাকার রেলমন্ত্রীর বাড়িতে হামলা ও ভাঙচুর করে।

একটি সূত্রে জানা গেছে, রেলমন্ত্রী এখন ঢাকায় অবস্থান করছেন। তবে তিনি ঢাকায় কোথায় আছেন তা কেউ নিশ্চিত করতে পারেননি। দলের নেতাকর্মীদের সঙ্গে তার কোনো যোগাযোগ হয়নি।

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, রেলমন্ত্রী জিল্লুল হাকিম রাজবাড়ী-২ আসনের ৫ বারের সংসদ সদস্য। সবশেষ দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি বিজয়ী হয়েছিলেন। এবারই প্রথম একটি গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পান।

এদিকে দলীয় সূত্রে জানা গেছে, রাজবাড়ী-১ আসনের সংসদ সদস্য এবং তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি কাজী কেরামত আলী গত ৩১ জুলাই ঢাকা থেকে রাজবাড়ীতে আসেন। সেদিন বিকেলে জেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ের এক অনুষ্ঠানে তিনি বক্তব্য দেন। গত ৩ আগস্ট ৯ দফা দাবিতে রাজবাড়ীতে বিক্ষোভ মিছিল করেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। 

এর পরের দিনও তিনি ছাত্রদের বিরুদ্ধে অবস্থান নেন। ৫ আগস্ট দুপুর পর্যন্ত কাজী কেরামত আলী ও তার মেয়ে রাজবাড়ীতে অবস্থান করছিলেন। কিন্তু সরকার পতনের খবর শুনেই তারা জেলা শহর থেকে পালিয়ে যান। তারা কোথায় গেছেন এ বিষয়ে দলের কেউ জানেন না। তবে একটি বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে, কাজী কেরামত আলী ভারতে চলে গেছেন।

সংসদ সদস্য কাজী কেরামত আলীর ছোট ভাই কাজী ইরাদত আলী জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। প্রভাবশালী এই আওয়ামী লীগ নেতা মেজো ভাই হিসেবে রাজবাড়ী শহরে পরিচিত। তিনি শারীরিকভাবে অসুস্থ। কোটা আন্দোলনের শুরু থেকেই তিনি রাজবাড়ীতেই ছিলেন। অসুস্থ হওয়ার পর রাজনীতিতে তেমন একটা সক্রিয় না হলেও কোটা আন্দোলনের সময় গত ৪ ও ৫ আগস্ট পর্যন্ত তার নেতৃত্বে সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চলে। ওইদিন দুপুরে সরকার পতনের খবর ছড়িয়ে পড়লে তিনি বিকেলে বাসা থেকে গাড়ি নিয়ে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন। এ সময় তিনি বিক্ষুব্ধ জনতার হাতে অবরুদ্ধ হন। বিক্ষুব্ধ জনতা তার গাড়ি ভাঙচুর করে ও তাকে মারপিট করে। তার সঙ্গে থাকা পিএস রিংকুকেও মারধর করে বিক্ষুব্ধ জনতা। পরে স্থানীয়রা বিক্ষুব্ধ জনতাকে বুঝিয়ে কাজী ইরাদত আলীকে ছাড়িয়ে নিয়ে আসে। পরে তারা গাড়ি নিয়ে বের হয়ে যান। এরপর থেকে তাদের আর কোনো খোঁজ মেলেনি।

এছাড়া রাজবাড়ী জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ফকরুজ্জামান মুকুট, সহসভাপতি মোহাম্মদ আলী চৌধুরী, সহসভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা ফকির আব্দুল জব্বার, সহসভাপতি আকবর আলী মর্জি, সহসভাপতি হেদায়েত আলী সোহরাব, পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি উজির আলী শেখ, সাধারণ সম্পাদক শফিকুল ইসলামসহ জেলার অন্য নেতারাও আত্মগোপন করেছেন।

সংশ্লিষ্ট সংবাদ

মন্তব্য