নরসিংদীর রায়পুরা উপজেলার কমলপুর এলাকায় ট্রেনে কাটা পড়া ছিন্নবিচ্ছিন্ন পাঁচ মরদেহ উদ্ধার করে রেলওয়ে পুলিশ। সোমবার (৮ জুলাই) ভোরে উদ্ধার হওয়া এসব মরদেহের পরিচয় না মেলায় রাতে ময়নাতদন্ত শেষে বেওয়ারিশ হিসেবে দাফন করেছে রেলওয়ে পুলিশ। এ ঘটনায় ভৈরব থানায় একটি অপমৃত্যু মামলা করা হয়েছে।
পুলিশের পাশাপাশি পিবিআই, সিআইডি ও উপজেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারাও ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। তবে মঙ্গলবার (৯ জুলাই) পর্যন্ত ঘটনাটি
কোন সময়ের, কোন ট্রেনে কাটা পড়েছে নাকি হত্যা করে মরদেহ এখানে ফেলে দেওয়া হয়েছে, তা এখনো নিশ্চিত হতে পারেনি পুলিশ। ঘটনাটি নিয়ে জনমনে রহস্য দানা বাঁধছে। আলোচনা চলছে গোটা জেলা ছাড়িয়ে দেশজুড়ে।
এদিকে পুলিশ ও রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা গেছে, মরদেহের পরিচয় শনাক্ত করতে ফিঙ্গারপ্রিন্ট সংগ্রহ করা হয়েছে। প্রাথমিকভাবে জানানো হয়েছে, সব মরদেহই পুরুষের। তাদের বয়স আনুমানিক ১৫ থেকে ২৫ বছরের মধ্যে হবে। স্টেশনে থাকা সিসিটিভির ফুটেজ পর্যালোচনা করা হয়। ভোরে চট্টগ্রাম থেকে ছেড়ে আসা ঢাকাগামী মেইল ট্রেনটি মেথিকান্দা স্টেশন অতিক্রম করার সময় সিসিটিভির ফুটেজে দেখা যায়, ট্রেনটির ছাদে কয়েকজন যাত্রী ছিলেন। এই যাত্রীরাই মারা গেছেন কি না সেটি নিশ্চিত হতে পারেনি রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ।
ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, রায়পুরা মেথিকান্দা স্টেশন থেকে আড়াই কিলোমিটার দূরে কমলাপুরে ঘটনাটি ঘটেছে। চারদিকে ঝোঁপঝাড়, আধা কিলোমিটারের মধ্যে কোনো জনবসতি নেই। রাস্তা পারাপারের প্রসঙ্গ নেই ঘটনাস্থলে, ফলে রেললাইন পার হতে গিয়ে কেটে মারা যাওয়ার প্রশ্নই ওঠে না। এই এলাকায় মানুষের চলাচলও হাতেগোনা। ফলে বিষয়টি নিয়ে স্থানীয়দের মাঝে সন্দেহ দেখা দিয়েছে।
স্থানীয়রা বলছেন, ওই ৫ তরুণের পোশাক দেখে টোকাই শ্রেণির মনে হয়েছে। ট্রেনের ছাদে বা ইঞ্জিনে বসে তারা হয়তো যাচ্ছিলেন। ফলে দুই বগির মাঝখানে বা ইঞ্জিন থেকে পড়ে গিয়ে কাটা পড়ে মারা গেছেন। তবে এভাবে পাঁচজনের মৃত্যুর বিষয়টি রহস্যজনক। কেউ কেউ বলছেন, হত্যার পর তাদের লাশ এখানে ফেলে যাওয়া হয়েছে।
ভ্যানচালক রফিক হায়দার বলেন, আগে কখনো এত মানুষের এমন মৃত্যু দেখিনি। তারা কীভাবে মারা গেছে বুঝতে পারছি না। সকালে উঠে লাশ দেখতে পাই। মনে হচ্ছে, হত্যার পর তাদের লাশ কেউ এই জায়গায় ফেলে গেছে।
স্থানীয় বারিক আলী বলেন, সকালে রেললাইনের পাশে লোকজনের ভিড় দেখে এগিয়ে আসি। এসে দেখি রেললাইনে মানুষের শরীরের বিচ্ছিন্ন কিছু অংশ ও রক্ত। একটু সামনে এগুতেই একটি মরদেহ দেখা যায়। পরে আরেকটু সামনে গেলে আরও চারটি লাশ দেখা যায়। এটি পারাপারের কোনো রাস্তা নয়। তাই এই মৃত্যুগুলো রহস্যজনক মনে হচ্ছে।
মেথিকান্দা রেলস্টেশন মাস্টার আশরাফ আলী বলেন, ভোর ৫টা ২২ মিনিটে উপবন, ৫টা ৪৮ মিনিটে ঢাকা মেইল ও সাড়ে ৬টায় তিতাস ঢাকার উদ্দেশ্যে মেথিকান্দা স্টেশন পার হয়েছে। এরমধ্যে কোনো ট্রেনে কাটা পড়ে তাদের মৃত্যু হতে পারে। তারা ট্রেনের ছাদ থেকে পিছলে পড়ে কাটা পড়েছেন, নাকি রেললাইনে বসে থাকা অবস্থায় কাটা পড়েছেন, তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তবে নিহত ব্যক্তিরা স্থানীয় কেউ নন বলে জানা গেছে। মরদেহ উদ্ধারের আগে ওই রেললাইন দিয়ে আরও তিনটি ট্রেন চলাচল করেছে।
নরসিংদী রেলওয়ে পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ উপপরিদর্শক মো. শহীদুল্লাহ বলেন, পিবিআই হাতের ছাপ সংগ্রহ করলেও তদের পরিচয় শনাক্ত করতে পারেনি। ধারণা করা হচ্ছে, তাদের কোনো জাতীয় পরিচয়পত্র নেই। আমরা মরদেহগুলোর ডিএনএ ও ভিসেরা সংগ্রহ করেছি। এগুলো ঢাকার মালিবাগের সিআইডি ল্যাবে পাঠানো হবে। ডিএনএ পরিচয় শনাক্তে ও ভিসেরা মাধ্যমে তারা কোনো নেশা করেছিল কি না শনাক্ত করা যাবে। মরদেহগুলো ময়নাতদন্ত শেষে রেলওয়ে কবরস্থানে সিরিয়ালভাবে দাফন করা হয়েছে। আর এটি হত্যা না দুর্ঘটনা সেটি ময়নাতদন্তের রিপোর্ট পেলেই বলা যাবে।
রেলওয়ের ঢাকা জেলার পুলিশ সুপার আনোয়ার হোসেন বলেন, লাশের পরিচয় শনাক্তের চেষ্টায় আঙুলের ছাপ নিয়েছে পিবিআই। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, এরা ট্রেনে কাটা পড়ে মারা গেছেন। কিন্তু অতীত অভিজ্ঞতা থেকে আমাদের ধারণা, ছাদ থেকে পড়ে মরদেহ এভাবে ছিন্ন-বিচ্ছিন্ন হয় না। আমরা সব বিষয় মাথায় রেখে তদন্ত করছি। ঘটনার সময় চলাচলকারী ট্রেন, টিটি ও যাত্রীদের সঙ্গে কথা বলে আমরা বিস্তারিত জানার চেষ্টা করছি। আশা করছি দ্রুতই রহস্য উদঘাটন করা যাবে।
মন্তব্য