নদী বাঁচানোর দাবিতে গাইবান্ধায় শুরু হয়েছে পালানাট্যের নৌযাত্রা

  • গাইবান্ধা প্রতিনিধি :
  • রবিবার, ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ১১:০৯:০০
  • কপি লিঙ্ক

নদী বাঁচাও ঐতিহ্য বাঁচাও,অভিন্ন নদীর অভিন্ন অধিকার চাই এ স্লোগনকে সামনে রেখে গাইবান্ধায় শুরু হয়েছে সাত দিন ব্যাপি পালানাট্যের নৌযাত্রা।সারথি থিয়েটার,গাইবান্ধার আয়োজনে মানসপাড় পাড় থেকে শুরু হয়েছে চলবে কুড়িগ্রাম পয়ন্ত।দেশজুড়ে জালের মত বিস্তৃত অসংখ্য নদীর সাথে আমাদের প্রাণের সম্পর্ক।আমাদের শিল্প সাহিত্য সংস্কৃতির বিকাশে ও বিস্তারে এ নদীগুলো প্রায়ই ভুমিকা অপরিসীম।কিন্তু পদ্মা মেঘনার মত আন্তজান্তিক নদীসহ দেশের প্রায়ই সব নদীই আজ অস্তিত্ব সংকটে। উৎসমুখে বাঁধ নির্মাণ,নদী-বাহিত পলি জমাট কলকারখানা বর্জ্য নির্গমন দখলদারিত্বের কালো থাবায় বসেছে বাংলাদেলের নদীমাতৃক পরিচয়টি। ভয়াবহ পরিবর্তন হচ্ছে জলবায়ু ও পরিবেশ।

তাই ঐতিহ্য ও নদী বাঁচানোর দাবিতে সারথি থিয়েটার আয়োজন করেছে পালানাট্যের নৌযাত্রা।২১ সেপ্টেম্বর ২০২৩ থেকে শুরু হয়ে এ নৌযাত্রা থেকে থেকে চলবে ১৩ অক্টেবর পযন্ত।ঘাটে ঘাটে পরিবেশিত হবে পালানাটক কালিন্দীর গীত।ড:সেলিম আল দীনের রচনা ও সায়েক সিদ্দিকীর নির্দেশনায় নাটকটি পরিচালনা করছেন দাড়িয়াপুরের সারথি থিয়েটার।এতে বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেন বিথি,কেয়া,প্রসনজিৎ,রফিকুল ,চন্ডিচরন,মকবুল,বিশাল,প্রান্ত,আলামিন,নদী ,বাবলু,পলাশ,আতিকুর ও অঞ্চলী সহ আরো অনেকেই।মানসপাড় থেকে হরিপুরঘাট, চিড়াকুটিরঘাট,বালাসীঘাট,কামারজানিঘাট,চিলমারীঘাট,তিস্তা ঘাট হয়ে শেষ হবে এই পালানাট্যে নৌযাত্রা ।

গাইবান্ধা শহর থেকে সোজা আট কিলোমিটার দূরের গ্রাম দাড়িয়াপুর।প্রত্যন্ত এই গ্রামের খেটে খাওয়া মানুষ একটি নাটকের দল চালা”েছন।নাম সারথি থিয়েটার।তাঁদের কেউ ভ্যানচালক,কেউ জেলে, কেউ কৃষক, কেউ অবসরপ্রাপ্ত কেরানি,কেউ শিক্ষার্থী।তাঁরা এখন নদী ঘাটে ঘাটে পালাগান করছেন।বিকাল থেকে শুরু হয়ে সন্ধ্যা নামার পর নিভৃত গ্রামে সুর উঠছে পালাগানের। শিকড়ের ঘ্রাণে তাতে বুঁদ হয়ে থাকছেন খেটে খাওয়া মানুষ। তাই নদীপারে মানুষকে  জাগ্রত করতে ও গ্রামের পিছিয়েপড়া জনগোষ্ঠিকে সচেতন করতে গাইবান্ধার নদীর ঘাটে ঘাটে নৌযাত্রা করে যা”েছন একদল নাট্য শিল্পি। গাইবান্ধার দাড়িয়াপুরের সারথি থিয়েটার নামের একটি সংগঠন গ্রামের বিভিন্ন জাগায় তাদের পালাগান কালিন্দির গীত পরিবেশন করছেন।নারী শিশু বৃদ্ধ সহ বিভিন্ন শ্রেনীর মানুষ উঠোনে বসে উপভোগ করছেন কালিন্দির গীত ।
গাইবান্ধার সাতটি ঘাটে শুরু হলো অভিনয়। পালানাট্যের নৌযাত্রা দর্শকও উপচে পড়া।পালা বলেই শুধু প্রবীণদের ভিড় হলো,এমনটি নয়।সন্ধ্যা হতেই দেখা গেল,তরুণ-তরুণীরাও হাজির সদলবলে।

কালিন্দির গীত নির্দেশক সায়িক সিদ্দিকী বলেন, নৌযাত্রায় সাতদিন ব্যাপি উৎসর্গ করা হয়েছে বাংলা নাটকের পাঁচ কীর্তিমতীকে— বিনোদিনী দাসী,তৃপ্তি মিত্র,ফেরদৌসী মজুমদারও শিমূল ইউসুফ;আর তাঁদের সঙ্গে যুক্ত হলেন সারথিরই প্রথম নারী নাট্যকর্মী মমতা রানী চাকী।
দলপ্রধান জুলফিকার চঞ্চল বলেন, পালা নিয়ে কোনো ধরনের প্রচার থাকে না আমাদের।কেবল যাঁর উঠানে কিংবা ঘাটে  আসর বসবে,তাঁকে জানিয়ে দেওয়া হয়।অভিনয়শিল্পীরা সন্ধ্যার কিংবা দুপুরে আগে নিজেরাই ত্রিপল বিছিয়ে অভিনয়ের জায়গা করে নেন। বিকাল থেকে সন্ধ্যা হতেই দর্শকসমাগম শুরু। বেশির ভাগই নারী। টেলিভিশনে হিন্দি সিরিয়ালে অভ্যস্ত নারীরা এক নতুন বিনোদনের মুখোমুখি। যার সঙ্গে শিকড়ের টান।পালা শেষে দর্শক ও অভিনয়শিল্পীর ভেদ যেন উড়ে যায়, এক পরিবার হয়ে ওঠেন। তিনি আরোও বলেন, করোনার সময় সবকিছু বন্ধ। তখন নাট্যকর্মীদের নিয়ে বাড়ি বাড়ি গিয়ে মাস্ক বিতরণ করা হতো। সুযোগ পেলেই একটু পারফর্ম করতেন। তাতে ব্যাপক সাড়া মেলে।সেই অনুপ্রেরণায় উঠানে পালার পরিকল্পনা।
 

সংশ্লিষ্ট সংবাদ

মন্তব্য