ফরিদপুরের সালথায় অভিভাবকের ভুয়া জাতীয় পরিচয়পত্র এবং বাংলাদেশীয় জন্মসনদ ও নাগরিক সনদ দিয়ে পাঁচ রোহিঙ্গার জাতীয় পরিচয়পত্র করার উদ্যোগ ধরা পড়ে গেছে। আবেদনগুলি যাচাই-বাছাই করে বাতিল করে দিয়েছে উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মোহাম্মদ আব্দুর রশিদ সেখ। আজ বৃহস্পতিবার (২১ সেপ্টেম্বর) উপজেলা নির্বাচন অফিস সুত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
জানা যায়, গত ১০ সেপ্টেম্বর উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তার কাছে জাতীয় পরিচয়পত্র পাওয়ার জন্য আবেদন করেন খোরশেদ আলীর মেয়ে দিলদারা বেগম (২৬), মনিরুল ইসলামের ছেলে নূর মোস্তফা (২১), খোকন মিয়ার ছেলে হাফিজুর রহমান (২৬), কালা মিয়ার মেয়ে বুশরা বেগম (২৫), আব্দুল মানিকের ছেলে নূর বশার (২৩) নামে ৫ ব্যক্তি। আবেদনের সময় তারা যে জন্ম সনদগুলি জমা দিয়েছিলেন সেগুলি সব কিশোরগঞ্জের নিকলি উপজেলার ছাতিরচর ইউনিয়ন পরিষদ থেকে করা এবং ওই ইউনিয়নের ইউপি চেয়ারম্যান ও সচিবের স্বাক্ষর করা। তাদের নামে গত ১০ সেপ্টেম্বর বল্লভদী ইউনিয়ন থেকে নাগরিক সনদ দেওয়া হয়। এতে বল্লভদি ইউপি চেয়ারম্যান খন্দকার সাইফুর রহমান শাহীনের স্বাক্ষর রয়েছে। জাতীয় পরিচয় পত্রের আবেদনপত্রে সনাক্তকারী হিসেবে বল্লভদী ইউপির আট নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য তাপস কুমার হোড়ের স্বাক্ষর রয়েছে। ফুলবাড়িয়া বাজারের করিম টেলিকমের মাধ্যমে কাগজপত্রগুলো তৈরি করে ওই পাঁচ ব্যক্তি।
ফুলবাড়ীয়া এলাকার কয়েকজন বাসিন্দা জানান, ফুলবাড়িয়া গ্রামে জাতীয় পরিচয়পত্রের জন্য আবেদনকারীদের বাবা হিসেবে দেওয়া খোরশেদ আলী, মনিরুল ইসলাম, খোকন মিয়া, কালা মিয়া, আব্দুল মানিক নামে কোন ব্যাক্তি নেই। এছাড়াও যাদের নাম ওঠে এসেছে এরা কেউ এই এলাকার লোক নয়। আমরা কেউ তাদেরকে চিনি না।
এ ব্যাপারে ফুলবাড়িয়া বাজারের করিম টেলিকমের স্বত্বাধিকারী করিম বাওয়ালীর মুঠোফোন ও দোকান বন্ধ থাকায় বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।
এদিকে, রোহিঙ্গাদের জাতীয় পরিচয়পত্রের আবেদনের সনাক্তকারী বল্লভদী ইউনিয়নের আট নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য তাপস কুমার হোড়ের বক্তব্য নেওয়ার জন্য মোবাইল ফোন বন্ধ থাকায় তার বাড়িতে গিয়েও তাকে পাওয়া যায়নি।
বল্লভদী ইউপি চেয়ারম্যান খন্দকার সাইফুর রহমান শাহীন বলেন, আমার স্বাক্ষর জাল করে ওই পাচজনের নামে নাগরিক সনদ দেওয়া হয়েছে। ওই নাগরিক সনদের স্বাক্ষর আমার না। এটি জাল স্বাক্ষর।
উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মোহাম্মদ আব্দুর রশিদ সেখ বলেন, আমার কাছে আবেদন আসার পর দেখি এদের জন্মসনদ এক জায়গার এবং তারা জাতীয় পরিচয়পত্র নিতে চান সালথার ফুলবাড়িয়া থেকে। এতে সন্দেহ হয়। তারা যে কাগজপত্র জমা দিয়েছিলেন তা যাচাই করে দেখা যায় দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে ওই কাগজগুলি তৈরি করা হয়েছে। এ বিষয়ে সন্দেহ দেখা দেওয়ায় তাদের গত ১০ সেপ্টেম্বর করা আবেদনগুলি তৎক্ষণিক বাতিল করা হয়।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোঃ আনিছুর রহমান বালী বলেন, পাঁচ রোহিঙ্গাকে জাতীয় পরিচয়পত্র দেওয়ার একটি ঘটনা ঘটতে যাচ্ছিল। তবে প্রাথমিক ভাবে সেটি ঠেকানো হয়েছে। এ ঘটনার সাথে যারা জড়িত তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত করাসহ অভিযান শুরু হয়েছে। কোন ব্যাক্তিকে এ ঘটনার সাথে সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেলে তাকে আইনের আওতায় আনা হবে।
মন্তব্য