ভাঙ্গায় মাইকিং ও ব্যান্ড বাজিয়ে সংঘাত, আহত ১০ 

  • ফরিদপুর প্রতিনিধি :
  • বৃহস্পতিবার, ২৪ আগস্ট ২০২৩ ০৯:০৮:০০
  • কপি লিঙ্ক

কতিপয় বখাটে যুবক কিছুদিন আগে ১৩ বছরের একটি মেয়েকে ইভ টিজিং করে। প্রতিবাদ জানায় মেয়েটির বড় ভাই। তার উপর ক্ষুব্ধ হয়ে উঠে বখাটে যুবকেরা। এ ঘটনা নিয়ে এগিয়ে যান মেয়েটির পিতা। তাকেও চরম বেইজ্জতই করা হয়। শুধু কি তাই? কথা বলায় তাকে হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে আঘাত করে। বিষয়টি ইউপি চেয়ারম্যানসহ গ্রামের লোকজনকে জানায় মেয়েটির পরিবার। 

পূর্ব ঘটনা নিয়ে আজিমনগর ইউনিয়নের পুকুরপাড় গ্রামের হবি হাওলাদারের ছেলে আকাশ হাওলাদারকে মারধর করে পার্শ্ববর্তী পাথরাইল গ্রামের জাহাঙ্গীরের ছেলে শাওন। এ ঘটনায় স্থানীয় ইউপি পরিষদে এক সালিশ বৈঠক হয়। এ সময় শাওনকে মাফ চাইতে বলা হয় আকাশের নিকট। কেন মাফ চাইতে হল শাওনকে এ নিয়ে সালিশের পরেই শাওন আকাশকে কুপিয়ে পালিয়ে যায়। এ ঘটনায় ইউনিয়ন বাসী সালিশ অমান্যকারীদের প্রতি চরম ক্ষিপ্ত হন। আকাশ হাওলাদারকে উদ্ধার করে ফরিদপুর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হলেও গত চারদিনেও শাওনদের পক্ষ থেকে কোন খোজ খবর না নেওয়ায় বেশ ক্ষিপ্ত হন গ্রামবাসী। 

আজ বৃহস্পতিবার বখাটেদের পক্ষের লোকজন দেশীয় অস্ত্র সজ্জিত হয়ে ব্যান্ড পার্টী বাজিয়ে সংঘাতে নেমে পড়লে তাদের সাথে যুক্ত হয় শত শত গ্রামবাসী। বিষয়টি মানসিকভাবে মেনে নিতে না পারায় প্রতিপক্ষের লোকজনও প্রতিবাদ্মুখী হয়ে সংঘাত করতে ঝাপিয়ে পড়ে। অবশেষে চলে ধাওয়া ও পাল্টা ধাওয়া।   

চাঞ্চল্যকর ঘটনাটি ঘটেছে ফরিদপুরের ভাঙ্গা উপজেলার আজিমনগর ও কালা মৃধা দুটি ইউনিয়নের গ্রামবাসীর মাঝে। সকাল ১০টা থেকে শুরু হয়ে থেমে থেমে চলতে থাকে ধাওয়া ও পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা। এসময় সেখানে রণক্ষেত্র পরিণত হয়। এভাবে চলতে থাকে বেলা ১২টা পর্যন্ত থেমে থেমে সংঘাত। এ ঘটনায় অন্তত উভয় পক্ষের ১০ জন আহত হয়েছেন। খবর পেয়ে ঘারুয়া, কালামৃধা  ও আজিমনগর তিনটি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানদের সমন্বয় প্রচেষ্টায় সংঘর্ষ নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয় পুলিশ। তবে থমথম অবস্থা বিরাজ করেছে দুটি ইয়নিয়ন এলাকায়। অজানা আতঙ্ক বিরাজ করছে সাধারণ পরিবারগুলোর মধ্যে।   

পুলিশ ও গ্রামবাসী সূত্রে জানা যায়, গত ক'দিন আগে আজিমনগর ইউনিয়ন পরিষদের পাতরাইল থানমাত্তা ও পুকুরপাড় গ্রামের মধ্যে ইভটিজিং ঘটনার পাশাপাশি ওই এলাকায় আধিপত্য নিয়ে একটি সালিশ হয়। ওই সালিশ চলাকালে পাতরাইল থানমাত্তা গ্রামের ৪/৫ জন বখাটে যুবককে পুকুরপাড় গ্রামের লোকজন মারধর করে। ওই ঘটনার সূত্র ধরে বৃহস্পতিবার সকাল ১০টার দিকে পাতরেল থানমাত্তা গ্রামের পক্ষ হয়ে কালামৃধা ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামের লোকজন এবং পুকুরপাড় গ্রামের পক্ষে আজিমনগর ইউনিয়নবাসীরা সমর্থন দেয়।  

এসময় গ্রামবাসীরা মাইকে দাঙ্গা ফ্যাসাদের আহ্বান জানান। আরেক পক্ষ দেশীয় অস্ত্রে সজ্জিত হয়ে ঢাকঢোল পিটিয়ে ব্যান্ড পার্টি নিয়ে সংঘাতের ময়দানে চলে আসে। দুই ইউনিয়নবাসীর বিভিন্ন গ্রামের হাজার হাজার সমর্থক সংঘর্ষের উৎসবের মেতে মেতে উঠে। সংঘর্ষের চলাকালেও মাইকে ঘোষণা আর ব্যান্ডপার্টির বাদ্য বাজিয়ে তারা সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। চলে ধাওয়া আর পাল্টা ধাওয়া। এভাবে চলতে থাকে কয়েক ঘণ্টা। খবর পেয়ে স্থানীয় তিন ইউপি চেয়ারম্যান এগিয়ে আসে। তারা ভাঙ্গা থানা পুলিশকে জানালে পুলিশ ঘটনা স্থলে ছুটে আসে। শত শত উত্তেজিত গ্রামবাসীকে সামাল দিতে গিয়ে পুলিশ অসহায় হয়ে উঠে। এওক্তি পর্যায়ে ইউপি চেয়রম্যান ও পুলিশ উভয়ের সহযোগিতায় বড় ধরনের সংঘর্ষ থেকে রক্ষা পায়। এ ঘটনায় এলাকায় থমথম অবস্থা বিরাজ করেছে।  

আজিমনগর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শাজাহান হাওলাদার বলেন,আমার ইউনিয়নের মধ্যে সবচেয়ে দাঙ্গা প্রকৃতির লোক। মূলত জাহাঙ্গীরের ছেলে শাওন ও তার ভাই সিরাজ মাদক ব্যবসা করে এলাকার যুবকদের বিপথে নিয়ে যাচ্ছে। কেউ প্রতিবাদ করলেই তাদের মারধর করে। এনিয়ে বিভিন্ন সময়ে আমরা একাধীকবার সালিশ বৈঠকে বসি।সালিশ বৈঠক শেষ হওয়ার পর মাফ চাওয়াকে কেন্দ্র করে ফের মারপিট করে। এজন্য ওদের বিরুদ্ধে ইউনিয়নবাসি ফুঁসে উঠেছে। তিনটি গ্রামের লোকজন জড়ো হয়ে ওদের দমন করতে চেয়েছিল। দুই গ্রামের মাঝখানে একটি বাজার (শিমুল বাজার) থাকায় বাজার লুটপাট হওয়ার ভয়ে আমরা উত্তেজিত গ্রামবাসীকে এগোতে দেই নাই। ঘারুয়া, কালামৃধা ও আজিমনগর তিন ইউপি চেয়ারম্যান ঐক্য প্রচেষ্টায় আমরা পরিবেশ শান্ত করি।

কালামৃধা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রেজাউল মাতুব্বর  বলেন, আমার এলাকার লোকজন পাতরাইল থানমাত্তা গ্রামের সমর্থন দিয়েছিল সত্য। কিন্ত পরে দেখলাম অতি তুচ্ছ ঘটনায় বড় ধরনের কোন ক্ষয়ক্ষতি হতে পারে
। এজন্য আমি তাদের সকলকে ফিরিয়ে দিয়েছি। হয়ত আল্লাহর রহমত ছিল বলেই বড় ধরনের দুর্ঘটনা থেকে আল্লাহ সকলকে হেফাজত করেছেন।  

ভাঙ্গা থানার অফিসার ইন চার্জ (ওসি) মো. জিয়ারুল ইসলাম জানান, পরিস্থিতি পুলিশের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। বর্তমানে এলাকা শান্ত।  যেভাবে গ্রামবাসী দেশীয় অস্ত্র নিয়ে সংঘাতে লিপ্ত হতে চলেছিল বড় ধরনের ক্ষতির হাত থেকে পুলিশ মানুষের জানমাল রক্ষা করতে পারাটাই ছিল পুলিশের নৈতিক দায়িত্ব ও কর্তব্য। পুলিশ সেটাই করতে পেরেছে।  আগামী রোববার থানায় মীমাংসার তারিখ দেয়া হয়েছে বলে জানান।

সংশ্লিষ্ট সংবাদ

মন্তব্য