ঈদুল আজহার এবারের ছুটিতে দেশের পর্যটনের প্রধান কেন্দ্র কক্সবাজারে পর্যটক সমাগমের সেই চিরচেনা রূপ না থাকলেও অপর কেন্দ্র কুয়াকাটা ভ্রমণের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে। বহুল আকাক্সিক্ষত স্বপ্নের পদ্মা সেতু চালু হওয়ায় এবার কুয়াকাটায় পর্যটকদের ঢল নেমেছে। খবর বাংলাদেশ প্রতিদিনের।
আগে ঢাকা থেকে সড়কপথে কুয়াকাটায় যেতে সময় লাগত ১০ থেকে ১২ ঘণ্টা। এখন পদ্মা সেতু চালু হওয়ায় মাত্র ছয় ঘণ্টায় সেখানে যাওয়া যায়। কম সময়ের পাশাপাশি পদ্মা সেতু অতিক্রম করে কুয়াকাটায় যাওয়ার সুযোগ হাতছাড়া করছেন না পর্যটকরা। ফলে এবার পর্যটকদের আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে দাঁড়িয়েছে কুয়াকাটা। কুয়াকাটার শতভাগ হোটেল-মোটেলে বুকিং রয়েছে বলে জানিয়েছেন হোটেল-মোটেল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মোতালেব শরীফ। পর্যটকের এমন ভিড়ে হাসি ফুটেছে পর্যটন-সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীদের মুখে। সার্বিক নিরাপত্তায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর টহল জোরদার করা হয়েছে।
অন্যদিকে দেশের পর্যটনের প্রধান কেন্দ্র কক্সবাজারে সমুদ্রসৈকতসহ বিনোদন কেন্দ্রগুলোতে বিপুল সংখ্যক পর্যটক সমাগমের চিরচেনা সেই রূপ এবার দেখা যায়নি। সোমবার থেকে সৈকতের লাবনী পয়েন্ট, সুগন্ধা পয়েন্ট, কলাতেলী পয়েন্টসহ বিভিন্ন পয়েন্টে এ ধরনের চিত্র দেখা গেছে।
পর্যটকরা জানান, আগের মতো হোটেল-মোটেলগুলোতে বাড়তি ভাড়া ও রেস্টুরেন্টে অতিরিক্ত টাকা আদায়ের প্রবণতা নেই। ভিড় না থাকায় ইচ্ছামতো ঘোরাঘোরি করতেও কোনো বেগ পেতে হচ্ছে না তাদের।
কক্সবাজার হোটেল-মোটেল গেস্ট হাউস মালিক সমিতির সভাপতি আবুল কাশেম সিকদার জানান, পদ্মা সেতু দেখা, কম সময়ে কুয়াকাটা ভ্রমণ ও বন্যার কারণে এবারের ছুটিতে কক্সবাজারে পর্যটক সমাগম তুলনামূলক কম। এ পর্যন্ত ৫০ শতাংশ কক্ষ ভাড়া হয়েছে। যত সম্ভব কম ব্যয়ে যাতে পর্যটকরা কক্সবাজারে ভ্রমণ করতে পারেন সে ব্যবস্থা করা হয়েছে।
পর্যটকদের উপচেপড়া ভিড় কুয়াকাটায় : কলাপাড়া (পটুয়াখালী) প্রতিনিধি জানান, পর্যটকদের পদচারণায় মুখর সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের বেলাভূমি সাগরকন্যা কুয়াকাটা সমুদ্রসৈকত। ঈদের তৃতীয় দিন গতকাল বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে পর্যটকদের ঢল নামে। সৈকতের বালিয়ারিতে গা ভাসিয়ে নেচে-গেয়ে আনন্দ উন্মাদনায় মেতে ওঠেন পর্যটকরা। কেউ সৈকতের বেঞ্চে বসেই সমুদ্র ও প্রকৃতির সৌন্দর্য উপভোগ করছেন। গঙ্গামতি থেকে লেম্বুর বন, দীর্ঘ ১৮ কিলোমিটার সৈকতের সব পর্যটন স্পটেই এখন পর্যটকদের পদচারণায় সরগরম। কোথাও যেন তিলধারনের ঠাঁই নেই।
সরেজমিনে দেখা গেছে, সাগরের নীল জলরাশি আর ঢেউয়ের গর্জন ও প্রকৃতির অপার সৌন্দর্য যেন পর্যটকদের মন কেড়ে নিয়েছে। এ ছাড়া শামুক-ঝিনুকের দোকানসহ বিপণিবিতানগুলোয় রয়েছে পর্যটকদের উপচে পড়া ভিড়। কুয়াকাটার দর্শনীয় স্থান কুয়াকাটার কুয়া, নারিকেল কুঞ্জ, ইকোপার্ক, জাতীয় উদ্যান, শ্রীমঙ্গল বৌদ্ধবিহার, সীমা বৌদ্ধবিহার, সুন্দরবনের পূর্বাঞ্চল খ্যাত ফাতরার বনাঞ্চল, গঙ্গামতি, কাউয়ারচর, লেম্বুরচর, শুঁটকি পল্লীসহ বিভিন্ন পয়েন্ট ঘুরে দেখছেন পর্যটকরা। থেমে নেই সৈকতে ফটোগ্রাফার ও ঘোড়ার দৌড়।
হোটেল সমুদ্র বাড়ির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. শামীম খান বলেন, এ বছর পদ্মা সেতু খুলে দেওয়ায় প্রথম ঈদে ব্যাপক পর্যটকের আগমন ঘটেছে। তাই তাদের হোটেলের সব রুম বুকিং রয়েছে। রুমের চাহিদা থাকা সত্ত্বেও পর্যটকদের রুম দিতে পারছেন না বলে তিনি জানান।
কুয়াকাটা ট্যুরিজম ম্যানেজমেন্ট অ্যাসোসিয়েশন কুটুমের সাধারণ সম্পাদক মো. হোসাইন আমির বলেন, পদ্মা সেতু খুলে দেওয়ার কারণে দেশে বিভিন্ন প্রান্ত থেকে এসব পর্যটক ছুটে এসেছেন। ছোট-বড় সব মিলিয়ে এখানে ১৬০টি আবাসিক হোটেল-মোটেল রয়েছে। কোনোটা এক দিনের জন্য, কোনো কোনো হোটেল দুই থেকে তিন দিনের জন্য রুম বুকিং রয়েছে। কেউ কেউ হোটেলের রুম না পেয়ে বাসা বড়িতে অবস্থান করছেন। কুয়াকাটা হোটেল-মোটেল মালিক সমিতির সভাপতি মো. শাহ আলম হাওলাদার জানান, হোটেল-মোটেল ও রিসোর্টগুলোর শতভাগ রুম বুকিং হয়ে গেছে।
মহিপুর থানার ওসি খোন্দকার মো. আবুল খায়ের বলেন, যে কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে থানা পুলিশ সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থানে রয়েছে।
কুয়াকাটা ট্যুরিস্ট পুলিশ জোনের পরিদর্শক হাসনাইন পারভেজ বলেন, আগত পর্যটকদের সর্বোচ্চ নিরাপত্তার লক্ষ্যে বিভিন্ন পর্যটন স্পটে বাড়তি পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। এ ছাড়া ফায়ার সার্ভিসের একটি টিমসহ সাদা পোশাকের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের নজরদারিতে রয়েছে।
তুলনামূলক পর্যটক কম কক্সবাজারে : আমাদের কক্সবাজার প্রতিনিধি জানান, ঈদুল আজহার ছুটিতে দেশে পর্যটনের প্রধান কেন্দ্র কক্সবাজারে সমুদ্রসৈকতসহ বিনোদন কেন্দ্রগুলোতে বিপুল সংখ্যক পর্যটক সমাগমের চিরচেনা সেই রূপ এবার দেখা যায়নি। সোমবার থেকে সৈকতের লাবনী পয়েন্ট, সুগন্ধা পয়েন্ট, কলাতেলী পয়েন্টসহ বিভিন্ন পয়েন্টে এ ধরনের চিত্র দেখা গেছে। কিন্তু মঙ্গলবার বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে স্থানীয়দের উপস্থিতি কিছুটা বেড়েছে। পদ্মা সেতু দেখা, কম সময়ে কুয়াকাটা ভ্রমণ ও বন্যার কারণে এবারের ছুটিতে কক্সবাজারে পর্যটক সমাগম তুলনামূলক কম বলে ধারণা করছেন ব্যবসায়ীমহলসহ সংশ্লিষ্টরা।
পর্যটকরা জানান, আগের মতো হোটেল-মোটেলগুলোতে বাড়তি ভাড়া ও রেস্টুরেন্টে অতিরিক্ত টাকা আদায়ের প্রবণতা নেই। ভিড় না থাকায় ইচ্ছামতো ঘোরাঘুরি করতেও কোনো বেগ পেতে হচ্ছে না।
কক্সবাজার টুরিস্ট পুলিশের সহকারী পুলিশ সুপার চৌধুরী মিজানুজ্জামান জানান, কক্সবাজারে আগত পর্যটকরা যাতে স্বাচ্ছন্দ্যে চলাচল করতে পারেন সে লক্ষ্যে তিন স্থরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। কোনো পর্যটক যাতে হয়রানি বা ছিনতাইয়ের শিকার না হন সে জন্য পোশাকধারী পুলিশের পাশাপাশি সাদা পোশাকে দিন-রাত কাজ করছে টুরিস্ট পুলিশের বিপুল সদস্য। এ ছাড়া বিভিন্ন পয়েন্টে সংযোজন করা সিসি ক্যামেরার মাধ্যমে সার্বক্ষণিক মনিটরিং করা হচ্ছে।
চৌধুরী মিজানুজ্জামান জানান, পদ্মা সেতু হওয়ায় রাজধানী ঢাকা থেকে মাত্র ৬ ঘণ্টায় কুয়াকাটা পৌঁছানো যাচ্ছে। এবার পদ্মা সেতু দেখার পাশাপাশি সেখান থেকে কুয়াকাটা সমুদ্রসৈকত দেখে আসছেন অনেক পর্যটক। সিলেটসহ বিভিন্ন এলাকায় ব্যাপক বন্যার কারণে অনেক পর্যটক আসতে পারেননি। সব মিলিয়ে অন্য বছরের তুলনায় কক্সবাজারে পর্যটকের আগমন কম হয়েছে।
কক্সবাজারে ইতোমধ্যে গড়ে উঠেছে ৫ শতাধিক হোটেল-মোটেল-গেস্ট হাউস। যেখানে প্রায় দেড় লাখ পর্যটকের রাত্রিযাপনের সুযোগ রয়েছে। আর এসব হোটেল-মোটলের সঙ্গে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িয়ে আছে অন্তত ২ লাখ মানুষের জীবন-জীবিকা।
বরিশাল : বরিশালে ঈদের তৃতীয় দিনেও বিনোদন কেন্দ্রগুলোতে উপচে পড়া ভিড় লক্ষ্য করা গেছে। সকালের দিকে প্রখর রোদ আর তীব্র গরমের কারণে তেমন লোকজন না থাকলেও বিকালে জমজমাট হয়ে ওঠে সবগুলো বিনোদন কেন্দ্র। নগরীর উন্মুক্ত বিনোদন কেন্দ্র বঙ্গবন্ধু উদ্যান, প্লানেটপার্ক, কীর্তনখোলা নদী তীরবর্তী মুক্তিযোদ্ধা পার্ক ও ত্রিশ গোডাউন, স্বাধীনতা পার্ক, কাঞ্চন পার্ক, দপদপিয়া সেতু, বাবুগঞ্জের দুর্গাসাগর এবং উজিরপুরের নান্দনিক বায়তুল আমান মসজিদ কমপ্লেক্সসহ ব্যক্তি মালিকানাধীন পার্কে রাত অবধি পদচারণা থাকে দর্শনার্থীদের। ঈদের দিন দুপুরের পর থেকেই জমজমাট হতে থাকে বিনোদন কেন্দ্রগুলো। ঈদের পর দিন সকালের দিকে কিছু দর্শনার্থীর সমাগম হলেও বিকালের দিকে পরিপূর্ণ ছিল সবগুলো বিনোদন কেন্দ্র। গতকালও একই চিত্র দেখা গেছে।
রংপুর : রংপুরে ঈদুল আজহার পরের দিন তীব্র গরম উপেক্ষা করে শিশু-কিশোরসহ সব বয়সের মানুষের উপচে পড়া ভিড় লক্ষ্য করা গেছে বিনোদন উদ্যানগুলোতে। ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করে নিতে শিশু-কিশোরদের সঙ্গে অভিভাবকদের উপস্থিতিও ছিল লক্ষ্যণীয়। তারা প্রচ গরমকে উপেক্ষা করে মেতে উঠেছিল ঈদ আনন্দে। রংপুর মহানগরীর বিনোদন উদ্যান চিড়িয়াখানা, তাজহাট জমিদার বাড়ি ও জাদুঘর, চিকলি পার্ক, কালেক্টরেট সুরভি উদ্যান, টাউন হল চত্বরসহ সব স্থানেই দেখা গেছে মানুষের ঢল। একই চিত্র শহর থেকে একটু দূরের ভিন্নজগৎ, আনন্দনগর, মহিপুরঘাট, কাউনিয়া তিস্তা সড়ক সেতু পয়েন্টেও। ছোট-বড় সব বয়সী মানুষের মাঝে ঈদ উদ্যাপনে ব্যস্ত রয়েছে বিনোদন কেন্দ্রগুলো। রংপুর চিড়িয়ারখানায় ভিড় ছিল দেখার মতো। নগরীর তাজহাট রাজবাড়ি ও জাদুঘর সব মানুষের পদচারণায় মুখর ছিল। ঐতিহ্যবাহী এ বাড়িটি রংপুরের বিনোদনপ্রেমীদের সবচেয়ে আর্কষণীয়।
অন্যদিকে রংপুর সিটি করপোরেশনের উদ্যোগে রংপুর বেতার কেন্দ্রের কোলঘেঁষেই নির্মিত রংপুর সিটি চিকলি পার্ক। সেখানে বিশাল চিকলি বিলের আশপাশ ঘিরে সাজানো হয়েছে শিশু-কিশোরদের আকৃষ্ট করার মতো নানা আয়োজন। বিলের বুকে স্পিড বোর্ড চলছে দ্রুত বেগে এ পাশ থেকে ও পাশ। হই-হুল্লোরে মেতে উঠছে সবাই। আর স্পিড বোর্ডের ছুটে চলার বেগে বড় বড় ঢেউ এসে ধাক্কা মারছে বিলের দুই কূলে। ছিটকে আসা জলরাশিতে মজা করছেন ছোট-বড় সব মানুষই।
কুমিল্লা : ঈদ উপলক্ষে কুমিল্লার বিনোদন কেন্দ্রগুলোতে দর্শনার্থীর ভিড় দেখা গেছে। সরকারি ও বেসরকারি মিলিয়ে কুমিল্লার অর্ধ ডজন বিনোদন কেন্দ্রে এরকম ভিড় দেখা গেছে। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য- শালবন বৌদ্ধবিহার ও ময়নামতি জাদুঘর, নব শালবন বিহার, ম্যাজিক প্যারাডাইস, ব্লু ওয়াটার পার্ক, ডাইনো পার্ক। এগুলো কোটবাড়ি লালমাই পাহাড় সংলগ্ন স্থানে অবস্থিত। লালমাই বাজার সংলগ্ন স্থানে রয়েছে লালমাই লেকল্যান্ড। নগরীর ডুলিপাড়ায় রয়েছে ফান ডাউন। নগরীর প্রাণ কেন্দ্রে রয়েছে কুমিল্লা নগর উদ্যান ও ধর্মসাগর। বিনোদন কেন্দ্রে কর্তব্যরতরা জানান, আগামী শুক্রবার পর্যন্ত এ ভিড় থাকবে।
নগরী থেকে ৮ কিলোমিটার দূরে শালবন বৌদ্ধবিহার। তবে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক থেকে দুই কিলোমিটার দূরে। যোগাযোগব্যবস্থা ভালো হওয়ায় এখানে বিভিন্ন উৎসব ও শীতে দর্শনার্থীর ভিড় লেগে থাকে। নিকটবর্তী স্থানে কিছু রেস্টুরেন্ট রয়েছে। তবে আবাসিক ব্যবস্থা গড়ে উঠলে আরও দর্শনার্থী বাড়বে। শালবন বিহারের পরে রয়েছে কোটিলা মুড়া, রূপবান মুড়া। বেসরকারি পার্কগুলোর মধ্যে বেশি রাইড রয়েছে ম্যাজিক প্যারাডাইসে।
বগুড়া : ঈদের ছুটিতে বগুড়ার বিনোদন কেন্দ্রগুলোতে ছিল মানুষের উপচে পড়া ভিড়। বগুড়ার ঐতিহাসিক মহাস্থানগড়, বেহুলার বাসরঘর, জাদুঘর, গোবিন্দ ভিটা, মমইন ইকোপার্ক, পৌর পার্ক, শহীদ খোকন পার্কসহ সারিয়াকান্দি যমুনা ও বাঙালি নদীকে ঘিরে প্রাণচাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। ঈদের পরের দিনও ছিল উল্লিখিত এলাকায় সাধারণ মানুষের ভিড়।
জানা যায়, বগুড়ার মমইন ইকোপার্কে নানা বয়সের হাজার হাজার নারী-পুরুষ ঈদের আনন্দ উপভোগ করতে এসেছেন। বিশেষ করে শিশু-কিশোর, যুবক-যুবতীসহ পরিবারের বিভিন্ন বয়সের সদস্যরা আনন্দে মেতে উঠেছে। এখানে রয়েছে শিশুদের জন্য নাগরদোলা, চরকি, গাড়ি ভ্রমণ, মিউজিক নৌকা, বাউঞ্চি ব্যালেন্স, বড়দের জন্য রয়েছে নৌকা ভ্রমণ, দোলনা, ঘোড়ার গাড়ি। এ ছাড়া আছে নানা ধরনের সুস্বাদু খাবার। পার্কের চারদিকে রয়েছে লেক। ঝরনাসহ আছে সুন্দর সুন্দর দৃশ্য। যমুনা পাড়ে ঈদের ছুটিতে সমুদ্রের আমেজ নিতে শত শত মানুষ ভিড় জমিয়েছেন। বগুড়ার সারিয়াকান্দি উপজেলার কুতুবপুর, কালিতলা, এলাকার যমুনা পাড়ে শত শত মানুষ প্রিয়জনদের নিয়ে আনন্দ ভ্রমণে এসেছেন। কেউ কার, কেউ সিএনজি অটোরিকশা, কেউ মোটরসাইকেল নিয়ে ঈদের ছুটির অবসর বিনোদনে ছুটে এসেছে যমুনা পাড়ের এসব জায়গায়। প্রতি বছরই এসব জায়গায় ভিড় জমায় লোকজন। যমুনা পাড়ের এসব জায়গায় নদী সংরক্ষণে সিমেন্টের ব্লক দিয়ে সুন্দর করে বেঁধে দেওয়ায় পরিবার-পরিজনদের নিয়ে নদীপাড়ে বসে ঘণ্টার পর ঘণ্টা গল্প করে সময় পাড় করে দিয়েছেন অনেকেই। বিশাল যমুনার ঢেউ দেখে অনেকেই আনন্দ উদ্যাপন করেন। কিছু পরিবার নৌকা ভাড়া নিয়ে ভ্রমণ করেন নদী।
মানিকগঞ্জ : মানিকগঞ্জে বিনোদনের কোনো স্থান না থাকায় লোকজন ঈদের দিন থেকেই ভিড় করছেন বিভিন্ন সেতুতে। শহরের কালীগঙ্গা সেতু, বালিরটেক সেতু, তিল্লী সেতুসহ জেলার সব সেতুই এখন বিনোদন কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে। বিনোদনের জন্য জেলাবাসীর সেতুই ভরসা। সকাল থেকেই বিনোদন পিপাসুরা বিভিন্ন সেতুতে দাঁড়িয়ে নদীর পানির দৃশ্য অবলোকন করেন। দুপুরের পর থেকে সেতুগুলোতে বিনোদন পিপাসুরা হুমড়ি খেয়ে পড়েন। বিশেষ করে কালীগঙ্গা সেতুটি দর্শনার্থীদের চাপে যানবাহন চলাচল প্রায় বন্ধ হয়ে যায়।
বাগেরহাট : ঈদুল আজহার ছুটিতে বাগেরহাটের বিশ্ব ঐতিহ্য এলাকা ষাটগম্বুজ মসজিদ, হযরত খানজাহান আলীর মাজার শরিফসহ ১৭টি প্রত্নতত্ত্ব এলাকায় পর্যটকদের ঢল নেমেছে। এ বছর সুন্দরবন ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা থাকায় ঈদ আনন্দ ভাগাভাগি করে নিতে পর্যটকদের উপচে পড়া ভিড় লেগেই রয়েছে বাগেরহাটের প্রাচীন ও ঐতিহ্যাসিক সব স্থানে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে সপ্তাহজুড়ে জেলার ঐতিহাসিক ও দর্শনীয় এসব স্থানে পর্যটকদের ভিড় থাকবে বলে জানিয়েছে বাগেরহাট প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ। এ ছাড়া বাগেরহাটের চন্দ্রমহল, সুন্দরবন রিসোর্ট, পৌর পার্কসহ মুনিগঞ্জ ও দড়াটানা সেতু ও শরণখোলার বলেশ্বর নদী তীরে দর্শনার্থীদের ভিড় ছিল চোখে পড়ার মতো। মা-বাবার সঙ্গে আসা শিশুরা এসব বিনোদন কেন্দ্রের বিভিন্ন রাইডে চড়ে আনন্দ উপভোগ করছে।
ঢাকা থেকে ষাটগম্বুজ মসজিদে পরিবার নিয়ে ঘুরতে আসা মমো চৌধুরী বলেন, অনেক আগে থেকেই ইচ্ছা ছিল মসজিদের শহর বাগেরহাট বেড়াতে আসার। কিন্তু সময়ের অভাবে আশা হয়নি। তাই এ বছর ঈদের ছুটিতে পরিবারের সবাইকে নিয়ে চলে এলাম। পদ্মা সেতু খুলে দেওয়ার পর এখন যোগাযোগ ব্যবস্থাও অনেক ভালো। ষাটগম্বুজ মসজিদ দেখলাম, খানজাহানের মাজার দেখলাম। আমার অনেক ভালো লেগেছে। এক কথায় বলতে গেলে বাগেরহাটের সব কিছু আমার কাছে অসাধারণ লেগেছে। আমাদের দেশে দেখার মতো যে অনেক কিছু আছে এখানে না এলে বুঝতাম না।
নীলফামারী : নীলফামারীর নীলসাগর, তিস্তা ব্যারেজ ও সৈয়দপুর উপজেলার থিমপার্ক, পাতাকুঁড়ি বিনোদন পার্ক ও রংধনু পার্কে রয়েছে উপচে পড়া ভিড়। এসব বিনোদন কেন্দ্রগুলো দশনার্থীদের পদচারণায় মুখরিত রয়েছে। শিশু-কিশোরদের বিনোদনের জন্য প্রতিটি পার্কে সুব্যবস্থা রেখেছেন পার্ক কর্তৃপক্ষ। থিমপার্কের ব্যবস্থাপক আবদুল খালেক বলেন, পার্ক এখন দশনার্থীদের পদচারণায় মুখরিত রয়েছে। শিশু-কিশোরদের বিনোদনের জন্য বিভিন্ন ধরনের রাইডের ব্যবস্থা রয়েছে।
পঞ্চগড় : পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষে হাজার হাজার পর্যটকের পদচারণায় মুখরিত হয়ে উঠেছে দেশের উত্তরের সীমান্ত জেলা পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া। তেঁতুলিয়ার নয়নাভিরাম ডাকবাংলোর পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া মহানন্দা নদীর পাড়ে ছুটি কাটানোর মহোৎসব চলছে যেন।
মহানন্দা নদীর তীরে গড়ে ওঠা এ পর্যটন স্থানে ঈদুল আজহা উপলক্ষে হাজারো পর্যটক ছুটে আসছেন। সকাল থেকে শুরু হয় পর্যটকদের আনাগোনা। বিকালে গোটা স্পট ভরে যায় লোকে। ঈদের আনন্দের সঙ্গে ঘুরে বেড়ানোর সুখ মিলেমিশে একাকার হয়ে যায় এখানে। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত বিশেষ করে উত্তরবঙ্গের জেলাগুলো থেকে পর্যটকরা ছুটে আসেন এখানে।
মন্তব্য