শহীদ মুগ্ধ আবু সাঈদের অপর নাম আমাদের বাংলাদেশ বিধায় ৫ আগষ্ট বীর শহীদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত বাংলাদেশে যেকোন কিছুর বিনিময়ে ইসকনকে রুখে দেয়ার ঘোষণা দিয়েছেন হেফাজত ইসলামের মহাসচিব মাওলানা মামুনুল হক।
ইসকন একটি সন্ত্রাসী সংগঠন উল্লেখ করে তিনি বলেন ওরা আমাদের দেশের শান্তিকে নষ্ট করার চেষ্টা করছে। সম্মিলিতভাবে দেশের জনগণকে নিয়ে তাদের রুখে দেয়া হবে। অতি দ্রুত ইসকনকে নিষিদ্ধ করতে হবে অন্যথায় হেফাজত ইসলাম রাজপথে নামতে বাধ্য হবে হুশিয়ারি করে তিনি বলেন হিন্দুদের নিরাপত্তা দেব আমরা। কিন্তু সন্ত্রাসী সংগঠন ইসকনকে সমুলে শিকর পর্যন্ত উপড়ে ফেলতে হবে।
বুধবার বিকেলে ফরিদপুর সরকারি রাজেন্দ্র কলেজ মাঠে খেলাফত মজলিশ আয়োজিত জনসভায় তিনি প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন।
মামুনুল হক আরও বলেন, বিগত জালিম সরকার নিজেদের জনবল বিচার বিভাগ ও প্রশাসন বিভাগে বসিয়ে ইচ্ছামত কাজ করেছে। দেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে জনগণের মুখোমুখি দাঁড় করিয়েছিল বলেই ২৪ এর আন্দোলনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী জনরোষে পড়ে।
শেখ হাসিনা প্রতিশোধের রাজনিতীতে বিশ্বাসী ছিল উল্লেখ করে তিনি বলেন শেষ পর্যন্ত তার দল আওয়ামী লীগ পরিবারের কর্মীদের সঙ্গেও প্রতিশোধ রাজনীতি টিকিয়ে রেখেছিল। এ দেশের ব্যাংক গুলোকে শূন্য মূলধন কোঠায় রেখে দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা ধ্বংসের প্রান্তে রেখে যাওয়ায় আজ দেশের মানুষ ব্যাংকে গিয়ে টাকা পায় না কিন্তু রাষ্ট্রীয় কাঠামো ধ্বংস করার পরেও তারা রাজনীতি করার চেষ্টা করছে।
হিন্দু সম্প্রদায়ের উদ্দেশে মামুনুল হক বলেন,আপনাদের নিরাপত্তা রাষ্ট্র দিতে ব্যর্থ হলে হেফাজত ইসলাম আপনাদের সকল ধরনের নিরাপত্তার ব্যবস্থা করবে। ভয়ের কোন কারণ নেই তবে কোন চক্রের পক্ষে হয়ে দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হবেন না।
সরকারের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, দীর্ঘ সময়ের জন্য রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আপনাদের বসানো হয়নি। দ্রুত একটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে জাতীয় নির্বাচন ব্যবস্থা করতে হবে। আলেম সমাজ নির্বাচনের দাবীতে রাজপথে সোচ্চরিত হোক এটা নিশ্চয়ই কোন শুভঙ্কর কিছু বয়ে আনবেনা নিশ্চয় বলে মনে করে বাংলাদেশ হেফাজত ইসলাম।
ফরিদপুর জেলা খেলাফত মজলিসের সভাপতি মাওলানা আমজাদ হোসেনের সভাপতিত্বে এবং জেলার সাধারণ সম্পাদক মুফতি আব্দুল নাসির এর সঞ্চালনায় এসময় উপস্থিত ছিলেন প্রধান উপদেষ্টা শায়খুল হাদিস আল্লামা হেলাল উদ্দিন সাহেব, উপদেষ্টা শায়খুল হাদিস আল্লামা আবুল হোসেন, কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ন মহাসচিব মাওলানা জালাল উদ্দিন আহমেদ, যুগ্ম মহাসচিব আতাউল্লাহ আমিন, যুগ্ম মহাসচিব মুফতি শরাফত হুসাইন কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা এনামুল হক মুসা , কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা আবুল হোসেন জালালী কেন্দ্রীয় সহ বায়তুল মাল সম্পাদক, মাওলানা ফজলুর রহমান কেন্দ্রীয় সহ প্রশিক্ষণ সম্পাদক মাওলানা জহিরুল ইসলাম, ফরিদপুর জেলা শাখার সিনিয়র সহ-সভাপতি সুবাহান মাহমুদ সহ-সভাপতি , মুফতি মাহমুদ হাসান ফায়েক। সহ-সভাপতি মাওলানা মিজানুর রহমান মোল্লা। ফরিদপুর ও পার্শ্ববর্তী জেলা উপজেলার নেতৃবৃন্দ বক্তব্য রাখেন।
অন্যান্য বক্তারা বলেন, বিগত দিনের আওয়ামী লীগ সরকারের বিভিন্ন কর্মকান্ড তুলে ধরে বলেন। গত ১৬ বছর ওলামা মাশায়েখের উপর ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকার যেভাবে গুম, খুন, নির্যাতন, মিথ্যা মামলা দিয়ে জেল বন্দি করেছিলেন তা ভুলে যাবার মত নয়।
৯৬ % মুসলমানের দেশ বাংলাদেশ যে দেশের ইসলামের পতাকা চিরতরে নিষিদ্ধ করে দেওয়ার জন্য আওয়ামী লীগ ও তার দোসররা এখনও বিভিন্ন পায়তারা করছেন।
গত ৫ই আগস্ট ফ্যাসিস্ট সরকারের ক্ষমতা এদেশের ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মাধ্যমে বাংলাদেশের স্বাধীন করে বাংলাদেশ থেকে বিতাড়িত করেন। ইসকনকে অবিলম্বে জঙ্গি সংগঠন হিসেবে তাই করে তাদের কর্মকান্ড বন্ধ করার জন্য অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের নিকট দাবি জানান।
চট্টগ্রামের একজন আইনজীবীকে যেভাবে তারা হত্যা করেছে তা খুবই দুঃখজনক এবং উদ্বেগ প্রকাশ করে বক্তারা বলেন একটি শান্তি প্রিয় রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে চাই যেখানে সম্প্রীতি বজায় থাকবে। আমরা যদি সকলে ঐক্যবদ্ধ থাকি তাহলে আমাদের কর্মকাণ্ড আগামী দিন এগিয়ে যেতে পারব। বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস আমরাই একটি শান্তিপ্রিয় ও দুর্নীতিমুক্ত রাষ্ট্র গড়তে পারব।
বক্তারা আক্ষেপ করে বলেন ফরিদপুরের মধুখালী উপজেলার পঞ্চপল্লীর মুসলমান হত্যার সুষ্ঠু বিচার এখনো হয়নি। আমাদের এই দেশে হিন্দু, বৌদ্ধ ও খ্রিস্টান সহ অন্যান্য ধর্মাবলম্বীর কাউকে হত্যা করে আমরা শান্তিপূর্ণ রাষ্ট্র গঠন করতে চাই না।
২০১৩ সালে ৫ ই মে শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের অনুষ্ঠানে যেভাবে গুলি করে আমাদের সাধারণ জনগণের উপর ওপর বর্বর হামলা চালিয়েছিল সেই ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ আজকে দেশ থেকে পালিয়েছে। যদি ফরিদপুরের মধুখালী উপজেলার পঞ্চপল্লীর মুসলিম পরিকল্পিত হত্যার বিচার হতো তাহলে চট্টগ্রামের যে আইনজীবীকে হত্যা করেছে তার পুনরাবৃত্তি ঘটতো না।
বিগত ১৫ বছরে ভারতের সাহায্য নিয়ে শেখ হাসিনা যেভাবে নির্বাচন চেয়েছে ক্ষমতা টিকে থাকার জন্য তাই করেছে। ভারতের সক্রিয় মদদে শেখ হাসিনা দেশের সংবিধান ভঙ্গ করে জাতির সাথে বেইমানি করেছেন। ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্ট হতে ২০২৪ সালের ৫ই আগস্ট পর্যন্ত শেখ হাসিনা প্রতিশোধের রাজনীতি করেছেন এই ছিল তার প্রতিশোধ পরায়ন রাজনীতি। আর্থিক খাতে সকল ব্যাংক নিয়ন্ত্রণ করে বিদেশে অর্থ পাচার করে দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা একেবারে ভঙ্গুর অবস্থায় রেখে গিয়েছে বলে ব্যাংকগুলোকে দেউলিয়া এবং ব্যাংকে টাকা না থাকায় মানুষের দুর্ভোগ বাড়ছে।
বক্তারা বলেন বাংলাদেশের অর্থনৈতিক ধ্বংস করাই ছিল শেখ হাসিনার মূল উদ্দেশ্য যাতে করে বাংলাদেশ বিশ্ব দরবারে আর মাথা উঁচু করে না দাঁড়াতে পারে। বাংলাদেশের সকল আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সকলকে শেখ হাসিনা তার নিজের জন্য পেটোয়া বাহিনী হিসেবে ব্যবহার করেছে।
বাংলাদেশে নতুন করে ওই ফ্যাসিবাদী আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার জন্য হিন্দু-মুসলিম দাঙ্গা লাগানোর একটি সুপরিকল্পিত ভাবে ষড়যন্ত্র করে যাচ্ছে তাই আমরা সকলেই সর্বদা প্রস্তুত থাকতে হবে এবং মোকাবেলা করার জন্য সর্বদা প্রস্তুত থাকতে হবে। জনগণের জানমাল রক্ষা ও তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার পর আপনাকে যদি জনগণ চায় তাহলেই আপনি থাকবেন না হয় অন্য কোন ষড়যন্ত্র করার চেষ্টা করবেন না যদি ভারতে বসে অন্য কোন ষড়যন্ত্র করার চেষ্টা করেন তাহলে আমরা সর্বাত্মক প্রতিরোধ গড়ে তা নস্যাৎ করে দিব। তাই এখন এই সময় বৈষম্যহীন সমাজ ব্যবস্থা ও ইনসাফপূর্ণ সমাজব্যবস্থা গড়ে তোলার। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের কোরআন সুন্নাহ মোতাবেক একটি সংবিধান গড়ে তোলার আহ্বান জানান। আগামীতে বাংলাদেশে আর বহিবিশ্বের কোন আধিপত্য চলবে না আমরা নিজেরাই আমাদের রাষ্ট্র ও সমাজ গড়ে তুলবো যাতে অন্যের ধরনা ধরতে না হয়। এর আগে বিভিন্ন স্থান থেকে একাধিক মিছিল সমাবেশ স্থলে এসে উপস্থিত হয়। অনুষ্ঠানের শেষ পর্বে দেশ ও মানুষের কল্যাণ কামনায় মোনাজাত অনুষ্ঠিত হয়।
মন্তব্য