ইরানের ওপর ইসরায়েলি হামলার পর মধ্যপ্রাচ্যে সহিংসতা বৃদ্ধি পেতে পারে জানিয়ে ‘গভীর উদ্বেগ’ প্রকাশ করেছেন জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস।
জাতিসংঘ মহাসচিবের মুখপাত্র স্টিফেন দুজারিকের বরাতে এ তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা এএফপি।
মুখপাত্র স্টিফেন দুজারিক তার বিবৃতিতে জানিয়েছেন, গুতেরেস জরুরিভাবে গাজা ও লেবাননে সমস্ত সামরিক কর্মকাণ্ড বন্ধ করতে সকল পক্ষের কাছে তার আবেদন পুনর্ব্যক্ত করেছেন। একটি সর্বাত্মক আঞ্চলিক যুদ্ধ ঠেকাতে সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা চালানোর এবং কূটনীতির পথে ফিরে আসার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকা ও লেবাননে সামরিক আগ্রাসন এবং হামাস ও হিজবুল্লাহর একাধিক নেতা ও কমান্ডার হত্যার জবাবে গত ১ অক্টোবর ইসরায়েলে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায় ইরান। ইসরায়েলের একাধিক সামরিক ঘাঁটি লক্ষ্য করে ১৮১টি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়ে ইসলামিক রেভল্যুশনারি গার্ড কোর (আইআরজিসি)।
তিন সপ্তাহেরও বেশি সময় পর ওই হামলার জবাবে শনিবার (২৬ অক্টোবর) ভোরে ইরানের রাজধানী তেহরান ও আরও কয়েকটি প্রদেশে একযোগে বিমান হামলা চালায় ইসরাইলি সামরিক বাহিনী (আইডিএফ)। হামলায় দুই ইরানি সেনা নিহত হয়েছে। তবে, সার্বিক ক্ষয়ক্ষতির খবর এখনও সামনে আসেনি।
হামলার পর তেল আবিব তেহরানকে হুঁশিয়ারি দিয়েছে, ইরান যদি প্রতিশোধমূলক হামলা চালায়, তাহলে সেজন্য তাদের চড়া মাশুল গুনতে হবে।
এই হামলার প্রতিক্রিয়ায় ইসরায়েলের প্রধান পৃষ্ঠপোষক যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য সংঘাতের বিস্তার না ঘটাতে ইরানের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে। তবে এই হামলার জবাব দেওয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছে ইরান।
এছাড়া ইরানে ইসরায়েলি বিমান হামলা পর প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে বিশ্বের আরও বেশ কয়েকটি দেশ। শনিবার (২৬ অক্টোবর) ওমানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, ইসরাইলি বিমান হামলা এমন ‘একটি উসকানি যা সহিংসতার আগুনে ইন্ধন দিচ্ছে এবং সেই সঙ্গে উত্তেজনা হ্রাস ও শান্তি প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টাকে দুর্বল করছে।’
ইরানের ওপর ইসরায়েলের হামলাকে দেশের সার্বভৌমত্বের লঙ্ঘন এবং আন্তর্জাতিক আইন ও নিয়মের লঙ্ঘন উল্লেখ করে নিন্দা জানিয়েছে সৌদি আরব। দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে বলা হয়, এই অঞ্চলে ক্রমাগত উত্তেজনা এবং জনগণের নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতার জন্য হুমকিস্বরূপ এমন সংঘাতের বিস্তার প্রত্যাখ্যান করে দৃঢ় অবস্থান নিশ্চিত করছে সৌদি আরব। সেইসঙ্গে এই অঞ্চলে অব্যাহত সামরিক সংঘাতের প্রভাব সম্পর্কে সতর্ক করে ‘সর্বোচ্চ সংযম অনুশীলন এবং উত্তেজনা হ্রাস করার’ জন্য সব পক্ষকে আহ্বান জানানো হয়েছে বিবৃতিতে।
ইরানের ওপর হামলার নিন্দা জানিয়েছে সংযুক্ত আরব আমিরাতও। আমিরাত পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে ইসরায়েলের নাম উচ্চারণ না করেই বলেছে, আমরা ইরানে হামলার নিন্দা জানাই। আমরা উভয় পক্ষকে সংযম প্রদর্শন এবং উত্তেজনা প্রশমনে বিচক্ষণতার পরিচয় দেয়ার আহ্বান জানাচ্ছি। একইরকম বিবৃতি দিয়েছে মধ্যপ্রাচ্যের আরেক দেশ কাতারও।
মিশর বলেছে, মধ্যপ্রাচ্যে ক্রমবর্ধমান উত্তেজনায় তারা উদ্বিগ্ন এবং এই অঞ্চলের স্থিতিশীলতা ও নিরাপত্তা বিনষ্টে যা কিছু জড়িত তার সবকিছুর নিন্দা জানায় তারা।
তুরস্ক বলেছে, গাজায় গণহত্যা, পশ্চিমতীরকে অধিগ্রহণ করার প্রস্তুতিসহ বিভিন্ন অপরাধ সংঘটিত করার সময় দখলদার ইসরায়েল ইরানে হামলা চালিয়ে মধ্যপ্রাচ্যকে এখন বিস্তৃত যুদ্ধের দিকে নিয়ে যাচ্ছে।
মধ্যপ্রাচ্যের আরেক দেশ ইরাক বলেছে, ইরানসহ বিভিন্ন জায়গায় হামলা চালিয়ে দখলদার ইহুদিবাদীরা এই অঞ্চলে যুদ্ধ বিস্তৃত করছে। এ ছাড়া জর্ডান, কুয়েত, মালয়েশিয়া ও পাকিস্তানও ইরানের ওপর ইসরায়েলি হামলার নিন্দা জানিয়েছে।
মন্তব্য