পিলখানা হত্যা মামলার পুনঃতদন্তে হাইকোর্টের রুল

  • অনলাইন
  • মঙ্গলবার, ০৫ নভেম্বর ২০২৪ ০১:১১:০০
  • কপি লিঙ্ক

ঢাকায় ২০০৯ সালের ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি তৎকালীন বাংলাদেশ রাইফেলসের (বিডিআর) সদর দপ্তর পিলখানায় বিদ্রোহের সময় সেনা কর্মকর্তাদের হত্যার ঘটনায় পুনঃতদন্ত কেন নয় তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন হাইকোর্ট। একইসঙ্গে পিলখানা হত্যা মামলার পুনঃতদন্ত চেয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে করা আবেদন নিষ্পত্তি করতে নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।

মঙ্গলবার (৫ নভেম্বর) বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি দেবাশীষ রায় চৌধুরীর হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন। আদালতে আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট তানভীর আহমেদ।

রিটকারী আইনজীবী বলেন, ৫৭ সেনা কর্মকর্তাকে হত্যার নেপথ্যের কারণ জানতে চায় দেশের জনগণ। অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর এ বিষয়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা পুনঃতদন্তের কথা বললেও এখনো কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। তাই রিট আবেদন করা হয়েছে।

পিলখানা ট্র্যাজেডির পর জাতীয় তদন্ত কমিশনের একজন সদস্য অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল হাসান নাসিরের বরাত দিয়ে আইনজীবী বলেন, ওই সময় সরকারের হস্তক্ষেপে শুধু কাগুজে তদন্ত হয়। এর প্রতিবাদ করলে তাকে সেনাবাহিনী থেকে চাকরিচ্যুত করা হয়। দায় এড়াতে তৎকালীন সেনাপ্রধান মঈন ইউ আহমেদ অসংলগ্ন কথা বলছেন বলেও জানান সাবেক এই সেনা কর্মকর্তা।

এর আগে, ২০০৯ সালের ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি পিলখানায় বিদ্রোহের সময় সেনা অফিসারদের হত্যার ঘটনা তদন্তের জন্য বিচার বিভাগীয় কমিশন গঠন করতে রিট আবেদন করা হয়। একই সঙ্গে বিডিআর বিদ্রোহের দিনকে সৈনিক শহীদ দিবস এবং হতাহতদের ক্ষতিপূরণের নির্দেশনা চাওয়া হয় রিট আবেদনে।

রিটে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব, মন্ত্রিপরিষদ সচিব, আইন, বিচার ও মন্ত্রণালয়ের সচিব, পুলিশের আইজিপি ও র‍‍্যাব ডিজিকে বিবাদী করা হয়।

হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় গত ২০ অক্টোবর সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট তানভীর আহমেদসহ দুই আইনজীবী এই রিট আবেদন করেন।

এর আগে, গত ১১ সেপ্টেম্বর বিডিআর বিদ্রোহের ঘটনা ফের তদন্ত করতে লিগ্যাল নোটিশ পাঠানো হয়। নোটিশ পাওয়ার সাতদিনের মধ্যে বিচার বিভাগীয় কমিশন গঠন ও ওই ঘটনায় নিহত প্রত্যেকের পরিবারকে ৫ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ ও আহতদের ২ কোটি টাকা করে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার সোলায়মান তুষারসহ ৯ জন আইনজীবী এই লিগ্যাল নোটিশ পাঠান।

নোটিশে বলা হয়, সম্প্রতি বিভিন্ন দেশি-বিদেশি সংবাদপত্র ও টেলিভিশনে প্রকাশিত সংবাদে বলা হয়েছে, বিডিআর বিদ্রোহের ঘটনা সঠিকভাবে তদন্ত করা হয়নি। ঘটনার সঙ্গে জড়িতরা শাস্তির আওতায় আসেনি। অনেক নিরীহ মানুষকে শাস্তি দেওয়া হয়েছে। সম্প্রতি সাবেক সেনাপ্রধান জেনারেল (অব.) জেনারেল মঈন উদ্দিন আহমেদ বলেছেন, বিডিআর সদর দপ্তরের নৃশংস হত্যাকাণ্ডের প্রকৃত ঘটনা জনগণ জানতে পারেনি।

নোটিশে আরও বলা হয়, সেনা অফিসারদের জীবন রক্ষা করার দায়িত্ব ছিল নোটিশগ্রহীতাদের। সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৩২ অনুযায়ী এ দায়িত্ব রক্ষায় তারা ব্যর্থ হয়েছেন। তারা তাদের দায়িত্ব এড়াতে পারেন না।

২০০৯ সালের ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি ঢাকার পিলখানায় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর সদরদপ্তরে বিদ্রোহের ঘটনায় ৫৭ সেনা কর্মকর্তাসহ ৭৪ জন নিহত হন। দেশের গণ্ডি পেরিয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে আলোড়ন তোলে ওই ঘটনা। এ ঘটনায় মামলার রায়ে বিডিআরের প্রাক্তন ডিএডি তৌহিদসহ ১৫২ জনকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়।

এছাড়া বিএনপি দলীয় প্রাক্তন সংসদ সদস্য নাসিরউদ্দিন আহমেদ পিন্টু (প্রয়াত) ও স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা তোরাব আলীসহ ১৬০ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড এবং ২৫৬ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেওয়া হয়। অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় ২৭৭ জনকে খালাস দেওয়া হয়। এ ঘটনায় বিস্ফোরক আইনে দায়ের করা মামলাটি এখনো নিম্ন আদালতে বিচারাধীন রয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সংবাদ

মন্তব্য