গত জুন মাসের ১২ তারিখ ভীষন ডিপ্রেশন নিয়ে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের গনিত বিভাগের সহকারী অধ্যাপক এ বি এম মানিক মুন্সির কাছে শরণাপন্ন হন বিভাগের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের এক শিক্ষার্থী। মেসের সমস্যা সহ হুট করে মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলার কারনই হলো ডিপ্রেশনে চলে যাওয়ার মূল কারন। এর পূর্বেও ওই শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয়ের কাউন্সিলিং সেন্টারে এসব সমস্যার কারনে একাধিকবার কাউন্সিল নেন। তাতে কোন পরিবর্তন না আসায় বিভাগের শিক্ষকের সহায়তা নেন তিনি।
সোমবার (৫ সেপ্টেম্বর) ঢাকা পোস্টকে এসব কথা বলেন অভিযুক্ত গনিত বিভাগের সহকারী অধ্যাপক এবিএম মানিক মুন্সি।
তিনি বলেন, একজন ডিপ্রেশনে থাকা শিক্ষার্থী যে কিনা মানসিক এস্ট্রেস হারিয়ে দুইবার আত্মহত্যার মত জঘন্য কাজ করার সিদা নিয়েছিলো। বিশ্ববিদ্যালয়ের কাউন্সেলিং সেন্টার থেকে দুইবার কাউন্সিল নেওয়ার পরও সে মানসিক বিপর্যস্ত থাকতো সর্বদা এরই পরিপ্রেক্ষিতে ওই শিক্ষার্থী একদিন আমাকে ফোন দিয়ে বলে স্যার আমি আপনার সাথে কিছু বিষয় শেয়ার করব তার কথার প্রেক্ষিতে আমি বললাম ক্যাম্পাসে এসে বিষয়গুলো শেয়ার করিও। পরদিন (১২ জুন) ওই শিক্ষার্থী আমার রুমে আসলে আমি তার ডিপ্রেশনে থাকার কারনগুলো জানার চেষ্টা করি। তখন সে নিজেই বলে স্যার আমি মাঝে মাঝে আমার মেজাজ ধরে রাখতে পারি না। এটা ছাড়াও হুট করে মানসিকভাবে ডিপ্রেশনে পড়ে যাই কোন কারন ছাড়াই।
ওই শিক্ষার্থী আরও বলেন, আমার মেসেও খুব সমস্যা। তখনই আমি ওর রুমমেট আমাদের বিভাগের এবং ওরই ব্যাচমেটকে ডেকে পাঠাই তার মাধ্যমে। কিছুদিন পরে সে রুমমেটকে নিয়ে আমার কাছে আসলে আমি তার কাছে মেসে কি সমস্যা সেগুলো জানার চেষ্টা করি। তখন সে (রুমমেট) জানায় ওই মেয়ে কিছুদিন পূর্বেও মেসে ভাংচুর চালায়। মাঝে মধ্যেই তার আচরণগুলো স্বাভাবিক থাকে না।
এদিকে সর্বশেষ গত বুধবারে ওই ছাত্রী আমার রুমে আসলে কিছুক্ষণ পরে বিভাগের এক সহকর্মী বিষয়টি দেখা মাত্রই অন্যদের ডাকাডাকি করতে থাকে। ওই ছাত্রী আমার রুমে আসছে সর্বচ্চ পাঁচ মিনিট হবে। এরপর ওই শিক্ষার্থী আমার রুম থেকে বের হওয়ার পরে তাকে পরদিন অর্থাৎ বৃহস্পতিবার দেখা করতে বলে। পরদিন ওই শিক্ষার্থী আমার ওই সহকর্মীর রুমে গেলে তাকে জোরজবরদস্তি ও ভয়ভীতি প্রদর্শনের মাধ্যমে তার মাধ্যমে অভিযোগ দেওয়া হয় বলে জানান অভিযুক্ত শিক্ষক।
বিয়ের প্রলোভন ও ছাত্রীর সাথে অনৈতিক সম্পর্কের কথা জানতে চাইলে ওই শিক্ষক বলেন এটা সম্পূর্ণ বানোয়াট ও মিথ্যা। আমার দুটো সন্তান রয়েছে সেটা বিভাগের সকলেই জানতো। ওই ছাত্রীকে আমি চিনি হলো গত জুন মাস থেকে এর পূর্বে ওদের ব্যাচের ক্লাস ছিলো তবে আমি তাকে ভালো চিনতাম না।
এদিকে মধু ও পানি পড়ার বিষয়টি জানতে চাইলে তিনি বলেন, কাউন্সিলিংয়ে যেহেতু কোন কাজ হয় নি তাই ইসলাম ধর্মের রীতিনীতি অনুযায়ী আমি ওই শিক্ষার্থীকে এগুলো ভালো একজন আলেমের কাছ থেকে ঝাড়ফুঁক দিয়ে নিতে বলেছি। তখন ওই শিক্ষার্থী আমাকে বললে আমি সেটা সংগ্রহ করে দেই।
এ সময় মানিক মুন্সি বলেন, আমি একটা ষড়যন্ত্রের শিকার। ওই শিক্ষার্থী আমার কাছে তার মানসিক স্ট্রেচের কথা বলায় আমি তাকে কিছু পরামর্শ দেই সেটা কি বড় রকমের অপরাধ করে ফেলছি আমি। গত বৃহস্পতিবারের ঘটনার পর ওই শিক্ষার্থীকে তিন ঘন্টা আটকে রেখে আমার বিরুদ্ধে জবানবন্দি নিয়ে জোর করে অভিযোগপত্র দেয়ার ব্যবস্থা করে আমাকে বিপদে ফেলেছে কেউ কেউ। অভিযোগ পত্র দায়ের করেই ওই শিক্ষার্থী লাপাত্তা। এখানেই তো প্রশ্ন জাগে?
তিনি আরও বলেন আমাকে নিয়ে ঢালাওভাবে প্রচার করা হচ্ছে আমার নাকি আমার স্ত্রীর সাথে ডিভোর্স হয়েছে। যেটা সম্পূর্ণ মিথ্যা। যে যেখান থেকে পারছে আমার বিরুদ্ধে যা ইচ্ছে তাই লিখছে।
এ বিষয়ে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীর সাথে গতকাল রাত থেকে বিভিন্ন মাধ্যমে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও কোনভাবেই যোগাযোগ করা সম্ভব হয় নি।
প্রসঙ্গত গতকাল (৪ সেপ্টেম্বর) জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) গণিত বিভাগের এক নারী শিক্ষার্থীকে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে অনৈতিক সম্পর্কের অভিযোগে একই বিভাগের এক শিক্ষককে বিভাগীয় সকল কার্যক্রম থেকে অব্যাহতি প্রদান করে বিভাগীয় একাডেমিক কাউন্সিল। একই সাথে বিভাগের পক্ষ থেকে ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য বরাবর লিখিত আবেদন দেয়া হয়েছে।
মন্তব্য