রেললাইন থেকে শ্রমিকদের অবরোধ সরে যাওয়ায় আবার ট্রেন চলাচল শুরু হয়েছে। তবে ব্যাপক শিডিউল বিপর্যয় ঘটেছে। সকাল ৯টা ১০ মিনিটে যে রংপুর এক্সপ্রেসের কমলাপুর ছেড়ে যাওয়ার কথা ছিল অবরোধের পর সেটা ছেড়েছে দুপুর আড়াইটায়।
কমলাপুর স্টেশন সূত্র বলছে, অবরোধের কারণে সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত একতা এক্সপ্রেস, কিশোরগঞ্জ এক্সপ্রেস, জয়ন্তিকা এক্সপ্রেস, চট্টলা এক্সপ্রেস, মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেস ও বনলতা এক্সপ্রেস স্টেশন থেকে বের হতে পারেনি।
টাঙ্গাইল কম্পিউটার, সিরাজগঞ্জ এক্সপ্রেস, উপকূল এক্সপ্রেস ও সুবর্ন এক্সপ্রেস কমলাপুরে ঢুকতে পারেনি।
ঢাকা (কমলাপুর) স্টেশন মাস্টার মো. আনোয়ার হোসেন কালের কণ্ঠকে বলেন, অবরোধের কারণে ট্রেনের শিডিউল বিপর্যয় হয়েছে। সময় এলোমেলো হয়ে যাওয়ায় ট্রেন ছেড়ে যেতে সময় লাগবে। তবে এখন পর্যন্ত কোনো ট্রেনের যাত্রা বাতিল করা হয়নি।
বাংলাদেশ রেলওয়ে সূত্র বলছে, ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক হতে রাত হয়ে যাবে। দেরি হলেও যেন কোনো ট্রেনের যাত্রা বাতিল না হয় সে বিষয়ে চেষ্টা করা হচ্ছে। শিডিউল বিপর্যয়ের কারণে কোনো যাত্রী যেতে না চাইলে তার টিকিটের টাকা ফেরত দেওয়া হচ্ছে।
এদিকে রেললাইনের অবরোধ তুলতে শ্রমিকদের সঙ্গে পুলিশের হাতাহাতির ঘটনা ঘটেছে।
দুপুর আড়াইটার দিকে রেললাইন থেকে শ্রমিকদের সরিয়ে দেয় পুলিশ। এ ঘটনায় দুজন আহত অবস্থায় গ্রেপ্তার হয়েছেন বলে শ্রমিক নেতাদের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হচ্ছে।
চাকরি স্থায়ী করার দাবিতে রাজধানীর মালিবাগ রেলগেটে একটি ট্রেন আটকে রেললাইন অবরোধ করেছেন বাংলাদেশ রেলওয়ের অস্থায়ী কর্মচারীরা। রবিবার (০৩ সেপ্টেম্বর) সকাল ১০টায় কমলাপুর থেকে কিশোরগঞ্জগামী এগারো সিন্দুর ট্রেনটি আটকে দেওয়া হয়।
রেলওয়েতে নিয়োগ পাওয়া অস্থায়ী শ্রমিকদের (টিএলআর) চাকরি ফেরত দেওয়া, স্থায়ীকরণ, আউটসোর্সিং প্রথা বাতিল এবং নিয়োগবিধি ২০২০ সংশোধন করে আগের মতো চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীদের যোগ্যতা অষ্টম শ্রেণি পাস বহাল রাখার দাবিতে এ অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন শ্রমিকরা।
শ্রমিক প্রতিনিধি দেলোয়ার হোসেন বলেন, ‘আমাদেরকে অবরোধ থেকে তুলতে পুলিশ লাঠিপেটা করেছে। এতে কয়েকজন শ্রমিক গুরুতর আহত হয়েছেন। দুজনকে গ্রেপ্তার করে কমলাপুর থানায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে।’
এর আগে চাকরি স্থায়ী করার দাবিতে হঠাৎ করেই গত ১৬ জুলাই রেলের অস্থায়ী কর্মীরা ট্রেন আটকে রাজধানীর এফডিসি রেলগেটে রেললাইনে অবস্থান নিয়ে আন্দোলন শুরু করেন। পরে পুলিশের উপস্থিতিতে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপক জাহাঙ্গীর হোসেনের আশ্বাসে আন্দোলনকারীরা রেললাইন থেকে অবস্থান তুলে নেন। সেখান থেলে রেল ভবনে গিয়ে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে আলোচনায় বসেন।
যত ঘণ্টা কাজ করেন তত ঘণ্টার মজুরি পান রেলওয়ে টিএলআর শ্রমিকরা। প্রায় ১০ বছর অস্থায়ী ভিত্তিতে রেলওয়ের বিভিন্ন দপ্তরে কাজ করে যাচ্ছেন তারা। কিন্তু ২০২০ সালের নিয়োগবিধিতে তাদের বেসরকারিভাবে কাজ করার নির্দেশনা দেওয়া হয়।
এ নিয়ে শঙ্কায় পড়েছেন রেলওয়ের প্রায় সাত হাজার টিএলআর শ্রমিক। চলতি বছরেরে জুন মাস থেকে তাদের অস্থায়ী ভিত্তিতে নিয়োগ বাতিল হয়ে গেছে। এর ফলে তারা চাকরি স্থায়ীকরণ ও আউটসোর্সিংয়ের প্রতিবাদে বিভিন্ন পর্যায়ে আলোচনা করে যাচ্ছেন।
যদিও গত ৭ আগস্ট রেলপথ মন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজনের সঙ্গে বৈঠক করেছেন সংশ্লিষ্ট নেতারা। সেখানে আগামী ডিসেম্বর পর্যন্ত তাদের চাকরি থাকবে বলে তিনি আশ্বাস দেন।
বৈঠক সূত্রে জানা যায়, আগামী ডিসেম্বর পর্যন্ত তাদের বেতন সঠিকভাবে দেওয়ার ব্যবস্থা করা হবে। এর পরের বিষয়টি আবার বিবেচনা করতে রেলপথ মন্ত্রী নিজেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে আলোচনা করবেন। নির্বাচনের আগে কোনো ধরনের আন্দোলনে না যেতে রেলমন্ত্রী আহ্বান জানিয়েছেন। তবে বৈঠক পরবর্তী দুই সপ্তাহের মধ্যে আন্দোলনকারীরা প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করার দাবি তুলেছেন।
মন্তব্য