রাজধানীর বেইলি রোডের বহুতল ভবনের ভয়াবহ আগুনের ঘটনায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৪৪ জনে দাঁড়িয়েছে। গুরুতর আহত হয়েছেন আরও অন্তত ২২ জন। এ ঘটনায় নিহতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। বৃহস্পতিবার রাত পৌনে ১০টার দিকে অগ্নিকাণ্ডের এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় নিহতদের মরদেহ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর শুরু হয়েছে। শুক্রবার ভোর ৫টা ৪১ মিনিটে মরদেহ হস্তান্তর প্রক্রিয়া শুরু হয়।
এর আগে, স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা. সামন্ত লাল সেন ৪৩ জনের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছিলেন। রাত দুইটার দিকে এ তথ্য নিশ্চিত করেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী। পরে রাজারবাগ পুলিশ হাসপাতালে মারা যান আরও একজন। ডা. সামন্ত লাল সেন বলেন, বেইলি রোডে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে ৩৩ জন এবং শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে ১০ জন মারা গেছেন। জরুরি বিভাগ ও বার্ন ইনস্টিটিউট মিলিয়ে এখন পর্যন্ত আহত ২২ জন চিকিৎসাধীন আছেন।
পরে রাত দুইটা ৩৫ মিনিটের দিকে পুলিশের আইজি চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, এখন পর্যন্ত ৪৪ নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে ঢাকা মেডিকেলে ৩৩ জন, বার্ন ইনস্টিটিউটে ১০ জন এবং একজন রাজারবাগ পুলিশ হাসপাতালে।
ফায়ার সার্ভিস জানিয়েছে, আগুন লাগা সাত তলা ভবনটির বেশিরভাগ ফ্লোরেই বিভিন্ন রেস্টুরেন্ট ছিল। ঘটনার সময় ওই রেস্টুরেন্টে অনেকে শিশু সন্তান, স্ত্রী ছাড়াও পরিবারের সদস্যদের নিয়ে খাবার খাচ্ছিলেন। দ্বিতীয় তলায় আগুন লাগার পর ৭ তলা ওই ভনটিতে আটকে পড়েন অনেকে। পরে তাদের অনেকেই সাত তলার ছাদে আশ্রয় নেন। তবে রেস্টুরেন্টগুলোয় একাধিক সিলিন্ডার থাকায় দ্রুতই পুরো ভবনে ছড়িয়ে পড়ে আগুন।
ফায়ার সার্ভিসের ডিউটি অফিসার এরশাদ হোসেন জানান, বেইলি রোডের কেএফসি ভবনের পাশে কাচ্চি ভাই রেস্টুরেন্টের ভবনে আগুন লাগার খবর আসে রাত ৯টা ৫০ মিনিটে। খবর পেয়ে প্রথমে চার ইউনিট, পরে আরও চারটি ইউনিট পাঠানো হয়। এরপর আরও চারটি ইউনিট কাজ শুরু করে। সব মিলিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ করে মোট ১৩টি ইউনিট। পরে রাত পৌনে ১১টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। এর মধ্যেই একের পর এক আটকে পড়া মানুষদের উদ্ধার করতে থাকে ফায়ার সার্ভিস। বিভিন্ন ফ্লোরে খাবার খেতে আসা মানুষদের অনেকেই ছাদে গিয়ে নিজেদের রক্ষা করার চেষ্টা করেন। ফায়ার সার্ভিস মই দিয়ে তাদের উদ্ধারের চেষ্টা করে। ভেতরে আটকে থাকা অনেকেই ধোঁয়ার কারণে জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন। রাত ১২টা পর্যন্ত ওই ভবন থেকে ৭০ জনকে জীবিত উদ্ধার করে ফায়ার সার্ভিস।
এদিকে, আগুনের খবর চারদিকে ছড়িয়ে পড়লে ভবনটির সামনে ভিড় করতে শুরু করেন ভেতরে আটকে পড়াদের স্বজনরা। অনেকেই স্বজনদের খোঁজ না পেয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন। সেখানে হৃদয়বিদারক দৃশ্যের অবতারণা ঘটে। অনেককেই দেখা যায় নিখোঁজ স্বজনদের ছবি নিয়ে ছোটাছুটি করছেন। এ ঘটনায় ফায়ার সার্ভিসের বিভিন্ন ইউনিট কাজ করার পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে ঘটনাস্থল ঘিরে রাখে পুলিশ ও র্যাব- মোতায়েন করা হয় ৩ প্লাটুন বিজিবি ও আনসার।
ভয়াবহ এ অগ্নিকাণ্ডে নারী-শিশুসহ ৪৪ জনের মৃত্যুর ঘটনায় পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। এতে সভাপতি করা হয়েছে ফায়ার সার্ভিসের পরিচালক (অপারেশন ও মেইনটেন্যান্স) লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম চৌধুরীকে। এছাড়া কমিটির সদস্য সচিব হিসেবে রয়েছেন ঢাকা বিভাগের উপপরিচালক মো. ছালেহ উদ্দিন। এছাড়া সংশ্লিষ্ট জোনের ডিএডি, সিনিয়র স্টেশন অফিসার এবং ওয়ারহাউজ ইন্সপেক্টরকে কমিটির সদস্য হিসেবে রাখা হয়েছে।
মন্তব্য