টুঙ্গিপাড়ায় কলেজ ছাত্রীর আত্মহত্যার চেষ্টা

  • দুলাল বিশ্বাস, গোপালগঞ্জ প্রতিনিধি :
  • সোমবার, ০৯ নভেম্বর ২০২০ ০২:২৯:০০
  • কপি লিঙ্ক

বাবার নির্যাতনেই অতিষ্ঠ ছিলো কলেজ ছাত্রী পাখি আক্তার (১৬)। বাবার মানসিক নির্যাতন ও মায়ের মৃত্যুর পর বাবা দ্বিতীয় বিয়ে করেন। সৎ মায়ের উসকানিতে পাখির ওপর বাবার অত্যাচার ও নির্যাতনের মাত্রা দিন দিন আরো বাড়তে থাকে। পাখির মায়ের পেনশনের টাকা পুরোপুরি আতœসাতের জন্য বাবার নির্যাতন সইতে না পেরে পাখি হারপিক পান করে আতœহত্যার চেষ্টা করে।এঘটনাটি ঘটেছে  টুঙ্গিপাড়া উপজেলার পাটগাতী গ্রামে। পাখি আক্তার পাটগাতী গ্রামের সৈয়দ রেজভী হাসানের মেয়ে। পাখি গোপালগঞ্জ শেখ ফজিলাতুন্নেছা সরকারি মহিলা কলেজের এইচএসসি ১ম বর্ষের ছাত্রী। হারপিক পানে অসুস্থ পাখিকে প্রথমে খুলনা ও পরে টুঙ্গিপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নিয়েছে। কিন্তু অবস্থার অবনতি হলে কর্তব্যরত ডাক্তার তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার করেছে। পাখি বর্তমানে ঢাকার মিডফোর্ড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে। এ ঘটনায় পাখির নানা আবুল বসার সরদার টুঙ্গিপাড়া থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন। অভিযোগে বলা হয়েছে, সৈয়দ রেজভী হাসান তার মেয়ে পাখিকে  ছোটবেলা  থেকেই শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করতো। নির্যাতন সহ্য করতে না আত্মহত্যার উদ্দেশ্যে টয়লেটে ব্যবহারের হারপিক পান করে। শুধুু পাখিই নয় তার মা আনজুমান আরার উপর ও শারীরিক নির্যাতন করতো সৈয়দ রেজভী। 

হাসপাতালে চিকিৎসারত পাখি আক্তার বলে, আমরা ১ ভাই ও ১ বোন। আমার  মা আনজুমান আরা টুঙ্গিপাড়ার ঘোপের ডাঙ্গা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করতেন। ছোটবেলা থেকেই দেখেছি মায়ের উপর বাবা বিভিন্ন সময়ে মানসিক ও শারীরিক নির্যাতন করতেন। এসব কারণে মা হৃদরোগে আক্রান্ত হন। এরপর ২০১৬ সালের ২৫ ডিসেম্বর হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে মা মারা যায়।  আমাদের অভিভাবক দাবি করে মায়ের পেনশনের একাকলীন ২৮ লাখ টাকা বাবা তুলে নেন। 

পাখি আরো জানায়, মায়ের মৃত্যুর ৪০ দিনও ধৈর্য ধরেননি বাবা। ২০১৭ সালের ১০ ফেব্রæয়ারী আবার বিয়ে করেন। সৎ মা আসার পর থেকে আমার মায়ের পেনশনের টাকা অতœসাতের কৌশল হিসেবে  শুরু হয় নতুন করে অত্যাচার নির্যাতন। তারা বাড়ির সব কাজ আমাকে দিয়ে করাতে শুরু করে। বিয়ে জন্য চাপ দিতে থাকে। তখন নানা বাড়িতে চলে গেলে একটা ছেলের সাথে প্রেমের সম্পর্ক রয়েছে এমন ক্ৎুসা রটায় বাবা ও সৎ মা। তাদের অত্যাচার সহ্য করতে না পেরেই আমি হারপিক পান করেছি। পাখির খালা আজমীরা খানম বলেন,পাখি হারপিক পান করার পর  গোপালগঞ্জ থেকে খুলনা রেফার করলে তার বাবা রেজভী  চিকিৎসার  জন্য কোন  টাকা পয়সা দেবে না বলে সাফ জানিয়ে  দেয়। এরপর  পাখির  বাবা ও সৎ মা অসুস্থ্য মেয়ের সাথে তো যেতে চায়ই নি, উল্টো বলেছে মেয়ে নাটক করছে। আমি টাকা পয়সা যোগাড় করে খুলনা নেয়া সহ চিকিৎসার ব্যবস্থা করি।

তবে এবিষয়ে পাখির বাবা সৈয়দ রেজভী হাসান  এসব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, আমার মেয়ে মানসিক ভারসাম্যহীন। মেয়ের উপর  আমি কোন অত্যাচার করিনি। আমাকে হয়রানি করার উদ্দেশ্যে আমার শ্বশুরবাড়ির লোকজন পাখিকে দিয়ে মিথ্যা অভিযোগ করিয়েছে। মূলত শশুর বাড়ি লোকজনের অত্যাচারে আমার মেয়ে মানসিক ভারসাম্য হীন হয়ে পড়েছে। এছাড়া পাখির আত্মহত্যার চেষ্টা এবারই প্রথম নয়, তার মায়ের মৃত্যুর পর একাধিকবার আত্মহত্যার চেষ্টা করেছে। কলেজ ছাত্রীর নানা আবুল বসার সরদার বলেন, আমার মেয়ে মারা যাওয়ার পর জামাই কোর্টে তার দুই সন্তানের অভিভাবকত্বের মামলা করলে কোর্ট তাকে অভিভাবকত্ব প্রদান করেন। অভিভাবকত্ব পেয়ে আমার মেয়ের পেনশনের প্রায় ২৮ লক্ষ টাকা জামাই নিজের হেফাজতে রাখে। এ টাকা আতœসাৎ করতেই সে মেয়ের ওপর নির্মম অত্যাচার নির্যাতন করে আসছে। টুঙ্গিপাড়া থানার ওসি  এএফএম নাসিম বলেন, পাখিকে অত্যাচারের বিষয়ে তার নানা আবুল বসার সরদার থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেছেন। বিষয়টি পারিবারিক। তাই তদন্ত শেষে পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। আমরা ইতিমধ্যে এ ঘটনার তদন্ত শুরু করেছি।
 

সংশ্লিষ্ট সংবাদ

মন্তব্য