শারদীয় উৎসবে মেতেছে মালো পাড়ার গোটা গ্রাম। ঘরে অসুস্থ স্বামী সুমিতা দেবীর। দুর্গা মায়ের আগমনে সুমিতা দেবী পরিবার উচ্ছ্বাসিত আনন্দিত ছিল অন্য সবারই মত। মা এসেছে (দুর্গা) স্বামী ও পরিবারের সবার জন্য মঙ্গল প্রার্থনাও করেন।
অসুস্থ স্বামীর জন্য মেয়েকে নিয়ে বাজারে ওষুধ কিনতে গিয়েছিল সুমিতা দেবী। কিন্ত বাড়িতে ফিরে দেখেন আগুনে ভস্মীভূত হয়ে গেছে বসতবাড়িসহ ঘরের মালামাল। মুহূর্তের মধ্যে দূর্গা পূজার উৎস আনন্দ ম্লান হয়ে পড়ে হতদরিদ্র সুমিতা দেবীর পরিবারে।
মর্মান্তিক ঘটনাট ঘটেছে গতকাল রোববার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গা উপজেলার দিগনগর বাজার সংলগ্ন পবনবেগ মালো পাড়ায় । গ্রামের সাধারণ মানুষ ক্ষতিগ্রস্থ সুমিতা দেবী পরিবারের বাড়িতে এসে সমবেদনা জানান।
জানা গেছে, পাঁচ মাস আগে সুমিতা দেবীর স্বামী সুজিত মালো স্ট্রোক করে। হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে যাওয়ার পরে সেখানে দ্বিতীয় দফা তিনি স্ট্রোক করেন। ফলে বাড়িতে বসে কোনোমতে চিকিৎসা চালাচ্ছেন। উমা ও সঞ্জিতা নামে তার দুই মেয়ে ও একমাত্র ছেলে সঞ্জিবন ঢাকায় একটি মাছের আড়তে কাজ করেন।
পূজা উপলক্ষে একমাত্র ছেলে বাড়িতে আসার কথাও আজ। কিন্ত দুর্গা মায়ের আগমনে যখন গ্রামের মালো পাড়ায় আনন্দময় পরিবেশের সৃষ্টি হয়েছে সেই মুহূর্তে ঘটে গেলো সুমিতা দেবীর পরিবারে বেদনাময় ঘটনাটি। মাথা গোজার ঠাই হিসেবে বসবাসের একমাত্র জরাজীর্ণ টিনের চৌচালা ঘরই ছিল সম্বল।
আগুনের সময় ঘরের বারান্দায় বসে থাকা অসুস্থ সুজিত মালোর চিৎকারে প্রতিবেশীরা এগিয়ে এলেও আগুন নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। চোখের নিমিষে যাবতীয় মালামালসহ পুরো ঘর আগুনে ভস্মীভূত হয়। খবর পেয়ে পার্শ্ববর্তী বোয়ালমারী থেকে ফায়ার সার্ভিসের একটি দলের পাশাপাশি আলফাডাঙ্গা থানার এসআই ইউনুসের নেতৃত্বে একদল পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে। কিন্ত ততক্ষণে পরিবারটির সবকিছু পুড়ে ছাই আগুনে।
সুজিত মালো জানান, বড় মেয়ে উমাকে নিয়ে তার স্ত্রী সকালে আলফাডাঙ্গা বাজারে যান তার জন্য ওষুধ কিনতে। তিনি ঘরের বারান্দায় বসেছিলেন। সকাল সাড়ে ১০টার দিকে ঘরে পোড়া গন্ধ পেয়ে তাকিয়ে দেখেন বিদ্যুতের মিটার ও সুইচ বোর্ড লাগানো দিক হতে ধোঁয়া বেরুচ্ছে।
মুহূর্তের মধ্যেই তাতে আগুন লেগে পুরো ঘরে ছড়িয়ে পড়ে। আগুন লাগার পর পড়নের লুঙ্গিটা ছাড়া আর কিছুই নাই। ঘরের একটি মালামাল বেড় করতে পারি নাই বলতেই তিনি কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন।
সুমিতা দেবী জানান, পুজার জন্য আমার একমাত্র ছেলে সন্ধ্যায় ঢাকা থেকে বাড়িতে আসবে। পরিবারের সবার জন্য পুজার কাপড় ও বিভিন্ন সদাই কিনে নিয়ে ছেলে আসবে। বাড়িতে এসে দেখবে মাথা গোঁজার ঠাইও নেই বলেই কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। আগুনে আমাদের সব হারিয়ে গেলেও মায়ের কৃপায় ভাগ্যক্রমে বেঁচে গেছেন আমার অসুস্থ স্বামী।
বোয়ালমারীর ফায়ার সার্ভিসের টিম লিডার আব্দুল খালেক বলেন, প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিট থেকে অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাত। ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ প্রায় পাঁচ লাখ টাকা বলে জানা গেছে।
গোপালপুর ইউপি চেয়ারম্যান খান সাইফুল ইসলাম দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, আমাদের ইউনিয়ন পরিষদ থেকে যতপ্রকার সাহায্য করা যেতে পারে আমি সুজিত মালো পরিবারকে আশ্বাস দিচ্ছি।
মন্তব্য