বস্তায় আদা চাষ করে সাফল্যে এনেছেন চাষী

  • অনলাইন
  • রবিবার, ২২ অক্টোবর ২০২৩ ১১:১০:০০
  • কপি লিঙ্ক

সুপারি ও মেহগনি কাঠের বাগানে পরিত্যাক্ত জায়গায় বস্তায় আদা চাষ করে সাফল্যের মুখ দেখেছেন কৃষক ইউসুফ আলী।৫০ হাজার টাকা খরচ করে অল্প সময়ে বস্তার আদা বিক্রি করে লাভের ৪ লাখ টাকা ঘরে তুলেছেন। তার সাফল্য দেখে এলাকার অনেকেই বস্তায় আদা চাষে উৎসাহিত হয়েছে। গাইবান্ধা শহর থেকে সোজা পশ্চিমে বলস্নমঝাড় ইউনিয়নের চক গয়েশপুর গ্রামের বাসিন্দা কৃষক মৃত ইয়াকুব আলীর ছেলে ইউনুস আলী।পিতার মৃতু্্যর পর সংসারের বোঝা পড়ে ইউনুস আলীর উপর।কৃষি বিভাগের পরামর্শ মতো সে তার পরিত্যাক্ত জায়গা সুপারি ও মেহগনি বাগানের ফাকে ফাকে ৫ হাজার বস্তায় আদা চাষ করে।আদা বিক্রি করে লাভের মুখ দেখতে পায়।তাই এবারও তিনি ৫ হাজার বস্তায় ওই স্থানে আদার চাষ করে। এতে ব্যয় হয় ৫০ হাজার টাকা। তবে তিনি এ পর্যন্ত বস্তা থেকে তুলে ২ লাখ টাকার আদা বিক্রি করেন।আরও ১ লাখ টাকার আদা বিক্রি করতে পারবেন বলে জানান।তাতে বস্তায় আদা চাষে লাভের পরিমান দাড়ায় আড়াই লাখ টাকা।এতে সে সন্তোষ্ট ও খুশি।তাকে দেখে আশে পাশের অনেকেই বস্তায় আদা চাষে উদ্ধুদ্ধ হয়েছে। বাণিজ্যিকভাবে বস্তা পদ্ধতিতে আদা চাষ করা হচ্ছে গাইবান্ধায়।এই পদ্ধতিতে একদিকে যেমন মাটিবাহিত রোগের আক্রমণ অনেক কমে যায়,অন্যদিকে প্রাকৃতিক বিপর্যয় হলে বস্তা অন্য জায়গায় সরিয়েও নিয়ে যাওয়া যায়।সদর উপজেলায় অনেক কৃষক ফসলি জমিতে আদার চাষ করে লাভবান হতে পারেন নি। তাই তারা বস্তায় আদা চাষে আগ্রহী হয়েছেন। গাইবান্ধা সদর উপজেলা সহ চাষ হচ্ছে সাদুলস্ন্যাপুর,পলাশবাড়ী,গোবিন্দগঞ্জ সহ বিভিন্ন স্থানে। এছাড়াও এ পদ্ধতিতে ফলন ভালো হচ্ছে বলে আগ্রহী হচ্ছেন কৃষকরা।

স্থানীয়রা জানান,সাদুলস্ন্যাপুর ও পলাশবাড়ী উপজেলায় অনেক ইউনিয়নে কৃষক আদা চাষে এই পদ্ধতি ব্যবহার করছেন।কৃষকরা প্রতি বছর ফসলি জমিতে আদা চাষ করে লাভের মুখ দেখতে পায়নি। তাই তারা বস্তা পদ্ধতিতে আদা চাষে আগ্রহী হচ্ছেন। গয়েশপুর বাসীন্দা কৃষক ময়নুল ইসলাম বলেন, গত তিন বছর থেকে আমি ৩শ বস্তায় আদা চাষ করছি।এই পদ্ধতিতে আদা চাষ খুব লাভজনক।৩০০ বস্তা থেকে আমি প্রায় ১২০০ কেজি আদা উৎপাদন করতে পারবো। বাজারে বর্তমানে পাইকারি প্রতি কেজি আদা ১২০ টাকায় বিক্রি হয়। এই অনুপাতে সকল খরচ বাদ দিয়ে প্রায় ৭০ হাজার টাকা আয় হবে।

গিদারী ইউনিয়নের চাকলীবাজার গ্রামের কৃষক শ্যামল চন্দ্র পাল বলেন, আমি ৩০ শতাংশ পতিত জমিতে প্রায় ৬ হাজার বস্তায় আদা চাষ করছি।বস্তায় আদা চাষ খুব সহজ।এতে খরচও কম হয়।বস্তা, আদা, সার এবং পরিচর্যা মিলিয়ে বস্তা প্রতি খরচ ৩২ টাকা।
গাইবান্ধা সদর উপ সহকারী কৃষি কর্মকর্তা,ইদ্রিস আলী বলেন, বস্তায় আদা চাষ করলে প্রাকৃতিক দূর্যোগে নষ্ট হয়ে যাওয়ার ভয় থাকে কম।একবার আদা তুলে ফেললে সেই বস্তায় কোনো সার দেওয়া ছাড়া আবার আদা চাষ করা যায়।এতে খরচ একেবারে কমে যায়।বস্তায় আদা চাষ করা খুব সহজ।এই পদ্ধতিতে গাছে মাটিবাহিত রোগ অনেক কম হয়।আর কোনো সমস্যা হলে বস্তা এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় সরিয়ে নেওয়া যায়। বস্তা পদ্ধতিতে বাড়ির ছাদে, উঠানে বা বাড়ির আশেপাশের খালি জায়গায় চাষ করা যায়।
তিনি আরোও বলেন,প্রথমে মাটির সাথে ১ ঝুড়ি বালি,১ ঝুড়ি গোবর সার ও দানাদার কীটনাশক ফুরাডান ৫জি ২৫ গ্রাম ভালো ভাবে মিশাতে হবে।তারপর ছত্রাকনাশক অটোস্টিন ২ গ্রাম এক লিটার পানিতে দিয়ে শোধন করে নিতে হবে।অন্য ছত্রাকনাশকও ব্যবহার করা যাবে।তারপর বস্তায় ৩ টুকরো আদা পুতে দিতে হবে।শোধনের পর কন্দগুলো আধাঘণ্টা ছায়ায় রেখে শুকিয়ে নিতে হবে।২০-২৫ দিন পর গাছ বের হবে।কয়েক সপ্তাহ পরে আদ গাছ বড় হয়ে যাবে।বর্তমানে এই উপজেলায় প্রায় ১৫ হেক্টর জমিতে আদার চাষ হচ্ছে। যারা বস্তায় আদা চাষ করছেন আমরা তাদেরকে পরামর্শ দিচ্ছি। 

সংশ্লিষ্ট সংবাদ

মন্তব্য