যুবক আল আমিন মোল্লা। ২০২২ সালের ৬ সেপ্টেম্বর নিখোঁজ হয়। তার নিখোঁজ হওয়ার প্রায় তিনমাস পর বিলের ধার থেকে (তারই) অজ্ঞাত পরিচয়ে লাশের মাথার খুলিসহ কয়েক টুকরা হাড়গোর উদ্ধার করে পুলিশ। আলামিনের প্যান্টের বেল্ট দেখে ওই হাড়গোর নিজের ছেলের বলে পিতা আকিদুল মোল্লার দাবী করেন। পুলিশ লাশের মাথার খুলি ও বেশ কিছু খন্ডিত হাড়ের ডিএনএ পরীক্ষায় পাঠায়। অবশেষে ডিএনএ পরীক্ষায় অজ্ঞাত লাশ সনাক্তকরণের মধ্যে দিয়ে ফরিদপুরের মধুখালী উপজেলার আলামিন হত্যাকান্ডের রহস্য উদঘাটন করে পুলিশ।
জেলা ডিবি পুলিশের চৌকস একটি টিম চাঞ্চল্যকর ও নির্মম এহত্যাকান্ডের রহস্য উদঘাটনসহ জড়িত মূল দুই আসামী গ্রেপ্তার করায় গতকাল শনিবার দুপুর একটায় জেলা পুলিশ সুপারের সম্মেলন কক্ষে সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। হত্যার রহস্য উৎঘাটন ও আসামী গ্রেপ্তার বিষয়ে নিশ্চিত করেন পুলিশ সুপার মো. শাহজাহান।
পুলিশ সুপার মো. শাহজাহান জানান, ২০২২ সালের ৬ সেপ্টেম্বর রাজবাড়ি জেলার বালিয়াকান্দি থানার খর্দ্দ মেঘচামী খাসকান্দি গ্রামের আকিদুল মোল্লার ছেলে আল আমিন মোল্লা (১৭) নিখোজ হয়। প্রায় তিন মাস পরে পার্শবর্তি ফরিদপুর জেলার মধুখালী উপজেলার ছাইভাঙ্গার বিলে অজ্ঞাত একটি লাশের মাথার খুলিসহ কয়েক টুকরা হাড়গোর উদ্ধার করে মধুখালী থানা পুলিশ।
নিহতের পিতা আকিদুল মোল্লা ২০২২ সালের ৩১ নভেম্বর বাদী হয়ে মধুখালী থানায় একটি মামলা করে। আলামিনের পিতা মাতার ডিএনএ ও লাশের উদ্ধার হওয়া হাড়গোড়ের ডিএনএ পরীক্ষার জন্য ঢাকার ফরেনসিক ল্যাবে পাঠানো হয়। ডিএনএ পরীক্ষার ফলাফলে উদ্ধার হওয়া আলামত আকিদুল মোল্লার ছেলে আল আমিন মোল্লার বলে নিশ্চিত হয় পুলিশ।
পুলিশ হত্যার রহস্য উৎঘাটন শেষে শুক্রবার বিকেলে রাজবাড়ির বালিয়াকান্দি থেকে আসামী আলমগীর হোসেনকে গ্রেপ্তার করার পর তার দেয়া তথ্য মতে নিবার ভোর ২টার সময় অপর আসামী মনির শেখকে বালিয়াকান্দির নিজ বাড়ি থেকে আটক করে পুলিশ। এসময় হত্যার কাজে ব্যবহৃত একটি চাপাতি উদ্ধার করা হয়।
পুলিশ সুপার আরও জানান, হত্যার কথা স্বীকার করে লোমহর্ষক ও নির্মম হত্যাকান্ডে ঘটনা বর্ণনায় আসামিরা পুলিশকে জানায়, আলামিন ও আসামী আলমগীর একসাথে নিজেদের একালায় মিজানের মুরগির ফার্মে কাজ করত। আলামিনের
পিতার সাথে একই এলাকার কাছিম মোল্লার সুদের টাকাপয়সা ও জমিজমা নিয়ে বিরোধ চলছিল। অপরদিকে মুরগির ফার্মের কিছু মালামাল চুরির ঘটনায় আলামিন জড়িত এসুযোগকে কাজে লাগায় তারা। মুরগি ফার্মের কর্মচারীদেরকে টাকা দিয়ে কাছিম মোল্লা ও অপর দুই সহযোগী আলমগীর হোসেন ও মনির শেখকে সাথে নিয়ে আলামিনকে বিলের মধ্যে ধরে নিয়ে যায়। ওই ছাইডাঙ্গা বিলের ধারেই তাকে হত্যা করা হয়। অতপর লাশ গুম করার জন্য শরীরে চাপাতি দিয়ে কয়েক টুকরো করা হয়। পরে বস্তায় ভরে পাশের বিলের মধ্যে ফেলে পালিয়ে যায় তারা। অবশেষে প্রায় তিন মাস পর বিলের পানি শুকিয়ে গেলে স্থানীয়রা ছেড়া একটি বস্তায় মানুষের হাড়গোড় দেখতে পায়। তারা তাৎক্ষণিক পুলিশ কে খবর দেয় বলে জানান পুলিশ সুপার। তবে আলামিন হত্যার মূলপরিকল্পনাকারীদের আরও একজন কাছিম গ্রেপ্তার পূর্বে মারা গেছে।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শৈলেন চাকমা, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোহম্মদ আব্দুল্লাহ বিন কালাম, মধুখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো, শহিদুল ইসলাম। সংবাদ সম্মেলন শেষে আসামীদের বিজ্ঞ আদালতে পাঠানো হয়।
মন্তব্য